করোনাকালেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বেড়েছে গ্রাহক, আমানত

এজেন্ট ব্যাংকিং
এজেন্ট ব্যাংকিং

করোনাভাইরাসের মধ্যে ব্যাংকসেবা সীমিত হয়েছে, প্রণোদনা ভাতা পেয়েছেন ব্যাংকাররা। তবে এই সময়ে এক দিনের জন্য বন্ধ ছিল না এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা, কোনো ভাতাও পাননি এজেন্ট কর্মীরা। এমনকি করোনায় মারা গেলেও তাঁদের জন্য নেই কোনো ক্ষতিপূরণ। এরপরও করোনার সময়ে বেশ ভালো করেছেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

এই করোনাকালেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রবাসী আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে হিসাব খোলা, আমানত ও ঋণ—সবই। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার ৪৫ শতাংশ গ্রাহকই নারী।

বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক এশিয়া। জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় এজেন্টরা বড় ভূমিকা রাখছে। গ্রামগঞ্জের অনেক গ্রাহক এই সময়ে ব্যাংক শাখায় আসতে চাননি। এ জন্য সেবা পেতে এজেন্ট ব্যাংকিং হয়ে উঠেছে অনেকের ভরসা।

 ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী আরও বলেন, ব্যাংকগুলোতে নারী গ্রাহকের হিসাব ২০-২৫ শতাংশ। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় নারী গ্রাহকের হিসাব ৪৫ শতাংশ। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে গ্রামীণ নারীরা যুক্ত হচ্ছেন। কারণ, এজেন্ট ব্যাংকিং বেশির ভাগ কার্যক্রমই গ্রামে।

>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ; যার ৪৫ শতাংশই নারী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫১ জন গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। এসব হিসাবের ৮৬ শতাংশ গ্রামে ও ১৪ শতাংশ শহরে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক হিসাবে মার্চ শেষে জমাকৃত অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকায়। যেখানে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রাহক ছিল ৫২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৬ জন এবং আমানতের স্থিতি ছিল ৭ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার ৯৫৫ জন এবং আমানত স্থিতি বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা।

 বর্তমানে সারা দেশে ২২টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। আর সারা দেশে সেবা দিচ্ছে ৮ হাজার ২৬০ এজেন্ট ও ১১ হাজার ৮৭৫টি আউটলেট। তবে সারা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় ঋণের পরিমাণ মাত্র ৬৭৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকের শাখা নেই—এমন এলাকায় মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে টাকা জমা, তোলা, স্থানান্তর, পরিষেবা বিল পরিশোধ ও প্রবাসী আয় তুলতে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে আর ব্যাংকের শাখায় দৌড়াতে হচ্ছে না। নিজ বাড়ির পাশের হাটবাজার বা ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রে থাকা এজেন্ট বা আউটলেট থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা মিলছে। টাকা জমা বা তোলা হলে তাৎক্ষণিক বার্তা যাচ্ছে নিবন্ধিত মুঠোফোনে। যাতে হিসাব সম্পর্কে সব সময় হালনাগাদ থাকছেন গ্রাহক। এভাবে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচকানাচে। কার্যক্রম শুরুর মাত্র সাত বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্ট
ব্যাংকিং সেবা অল্প সময়েই ভালো সাড়া ফেলেছে। ব্যাংকগুলো শুধু আমানতের পেছনে না ছুটে ছোট ছোট অঙ্কের ঋণও যেন দেয়, সেটাই বাংলাদেশ ব্যাংকের চাওয়া। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে।

জানা যায়, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিলে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। পাইলট কার্যক্রম শুরু করে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায়।