দেশের অর্থনীতির পুনর্জাগরণে কাজ করবে বিএলএফসিএ

অনলাইন ডেস্ককোভিড -১৯ এর কারণে চলমান সংকটের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যথাযত তারল্যের সংস্থান, অভ্যন্তরীণ সামর্থ বৃদ্ধি এবং দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) আরও এগিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)-এর নেতারা।
আগামী দুই বছরের ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিএলএফসিএ-র নব-নিযুক্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রথম অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্য, অর্থনীতিতে অবদান এবং চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, 'দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিগত কয়েক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে দেশে ৩৩ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সারাদেশে ২৭৬ শাখার ও ৮ হাজার ৩৫৮জন কর্মকর্তার মাধ্যমে ২ লাখ ৫৫ হাজার গ্রাহককে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিসেম্বর ২০১৯ ভিত্তিক ঋণের স্থিতি ৬৭ হাজার কোটি টাকার উপরে যার বেশির ভাগ মেয়াদি শিল্প ঋণ, এসএমই ঋণ এবং হাউসিং সেক্টরে বিতরণের মাধ্যমে বছরে এক লাখেরও বেশি নতুন কর্ম সংস্থান তৈরি হচ্ছে।
মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ডিসেম্বর ২০১৯ ভিত্তিক তথ্যে দেখা যায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১৬.৯% সেখানে ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১১.৬%, সম্পদের বিপরীতে উপার্জনের হার ব্যাংকিং খাতের দ্বিগুণেরও বেশি (১.০% এর বিপরীতে ০.৪%)। এ ছাড়া বিনিয়োগের উপর আয়ের হারের দিকেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকিংখাতের চেয়ে এগিয়ে আছে এবং খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকিংখাতের কাছাকাছি রয়েছে। কিন্তু দুই তিনটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পুরো সেক্টরটির সুনাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সহায়তায় বিদ্যমান তারল্য সংকটের দ্রুত সমাধান করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ব্যবসার পুনর্গঠনে কাজ করবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএলএফসিএর কার্যনির্বাহী সদস্য ও আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ খান বলেন, সরকারি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেশি থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ইস্যুকৃত বন্ডগুলোতে বিনিয়োগকারীরা ইনভেস্ট করতে আগ্রহী হয় না। এ ছাড়া বন্ড ইস্যুর প্রসেস বাংলাদেশে অনেক দীর্ঘ।নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশীদেশগুলোর উদাহরণ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় নীতি পরিবর্তন করতে হবে। একই সাথে ফিক্সড ইনকাম মিউচুয়াল ফান্ডের প্রবর্তনের মাধ্যমে কর্পোরেট বন্ডের বিনিয়োগকারী তৈরি করতে হবে।

আগামী দুই বছরের ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে বিএলএফসিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান ও আইআইডিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, দেশের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও এগিয়ে নিতে আমরা এই সেক্টরে থাকা সকল কর্মীদের দক্ষতার জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করছি। সাথে সাথে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুরত্ব কমানো, আইসিটি ভিত্তিক উন্নয়ন এবং বন্ড মার্কেট বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে ব্যাংক, সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর সহ সকল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর সাথে নিয়মিত বৈঠক করা হবে।
বিএলএফসিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান ও ইসলামিক ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য প্রতিটি সেক্টরের কাজ ও নিয়মনীতি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন। দুইটি সেক্টর সেক্টর যদি একই কাজ করে তাহলে কাঙ্খিত ফলাফল আসবে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সেক্টরের আরো উন্নয়নের জন্য বিএলএফসিএ সদস্য কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএলএফসিএর কার্যনির্বাহী সদস্য ও উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এসএম শামসুল আরেফিন বলেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের প্রতিযোগি হতে চায় না তাদের সহযোগী হয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চায়। ব্যাংকগুলোর চেয়ে আমাদের সার্ভিসগুলো অনেকটা সহজ ও গ্রাহকমুখী। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো করপোরেটগুলোও দ্রুত ও সহজে ঋণ পাওয়ার জন্য সুদের হার একটু বেশি হলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা গ্রহণ করে। তিনি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও সেবা পরিচিত করার জন্য বিএলএফসিএর চলমান এবং ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনার বিবরণ দেন।