মজুরি দিতে আবার ঋণ পাচ্ছেন পোশাকশিল্প মালিকেরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি দিতে আবারও সরকারের প্রণোদনার তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। ফলে এপ্রিল, মে ও জুনের পর চলতি জুলাই মাসের মজুরি নিয়ে দুশ্চিন্তা রইল না তাঁদের। যদিও জুলাইসহ আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মজুরি দিতে অর্থ চেয়েছিল পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার ৪৭টি ব্যাংকের কাছে এ–সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, শেষবারের মতো চলতি জুলাই মাসের মজুরি দিতে তহবিল থেকে ঋণ পাবেন রপ্তানিকারকেরা। গত জুনে যেসব উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছিলেন, তার বাইরে কেউ নতুন কেউ পাবেন না। ওই ঋণের বিপরীতে প্রথম তিন মাসের সার্ভিস চার্জ ২ শতাংশ। চলতি মাসের ক্ষেত্রে অবশ্য সেটি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সরকার সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে। পোশাকশিল্পের মালিকদের এই সুবিধা দেওয়ার জন্য করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন বাবদ ঋণ দিতে ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে পোশাকের বিপুলসংখ্যক ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হলে সরকার রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করে। সেই তহবিলের বড় অংশই নিয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। গত মে মাসে বিজিএমইএর ১ হাজার ৩৭৭ ও বিকেএমইএর ৪১৯ সদস্য কারখানা এই তহবিল থেকে ঋণ পেয়েছে। গত মাসে ঋণ পাওয়া কারখানার সংখ্যা কিছু কমেছে।

জুলাই মাসের মজুরি দিতে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন পড়বে ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি ৪৭টি ব্যাংক এই ঋণ দেবে। গতকালই ব্যাংকগুলোকে নতুন নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ পেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় মজুরির জন্য ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান জানান, তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পেয়েছেন। আগের মতো মজুরির অর্থ শ্রমিক ও কর্মচারীর নিজস্ব মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস হিসাবে যাবে। টাকা তোলার খরচ ব্যাংককে দিতে হবে।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশ লকডাউন জারি করে। ফলে ওই সব দেশে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তাতে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। সব মিলিয়ে ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়। এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের মাসে তা ১২৩ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য জুনে খাতটি ঘুরে দাঁড়ায়, রপ্তানি হয় ২২৫ কোটি ডলারের পোশাক। চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে রপ্তানি হয়েছে ৯৮ কোটি ডলারের পোশাক।

 পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, গতবারের তুলনায় বর্তমানে ৭০-৮০ শতাংশ ক্রয়াদেশ আসছে। অনেকগুলো বড় ব্র্যান্ড স্থগিত ও বাতিল হওয়া পণ্য নিতে শুরু করায় পোশাক রপ্তানি জুন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।