ডেসটিনি টাকা দেয়নি কাউকেই

বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসায়ের নাম করে এক যুগ ধরে মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল ডেসটিনি। ২০১২ সালে ধরা পড়ার পর কেটে যায় আরও আট বছর। অথচ এত বছরেও গ্রাহকদের কেউ কোনো টাকা ফেরত পাননি। ডেসটিনির নিজের হিসাবেই তাদের ক্রেতা, পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী মিলে ৪৫ লাখ।

আবার এখন পর্যন্ত মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়নি একটিরও। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবশ্য বলছে, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হওয়ায় কোনো মামলাই রায় হওয়ার পর্যায়ে আসেনি। একটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষের দিকে থাকলেও আরেক মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শুরুর দিকে।

তবে আদালত চার বছর আগে ডেসটিনির কাছ থেকে টাকা ফেরত আনার একটি উপায় বের করলেও তা কাজে দেয়নি। ফলে একটি করে বছর যাচ্ছে, আর বাড়ছে গ্রাহকদের বঞ্চনা। দুদক, আদালত সূত্র এবং ডেসটিনি গ্রুপসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

মাঝখানে ডেসটিনির গাছ বিক্রি করে টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ শামসুল হক ভূঁইয়া। কিন্তু ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এই সাংসদও তা পারেননি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর দেওয়া নির্দেশনায় শামসুল হক ভূঁইয়াকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের সিইও শামসুল হক ভূঁইয়া গত ২৭ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যুক্ত হয়েছিলাম ঠিক। আদালতের রায়ে আমার নামও আছে। কিন্তু সিইও হিসেবে আরও কয়েকজনকে নিয়ে যখন বান্দরবানে গাছ পরিদর্শনে যাই, দেখি এগুলো ছোট ছোট। বড় গাছগুলো কেউ না কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। আর ছয় সপ্তাহে গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।’

কেন যুক্ত হলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘দুর্ঘটনায় একজন লোক যদি রাস্তায় পড়ে থাকেন, আমার কি দায়িত্ব না তাঁকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া? আমি এ কাজটাই করতে চেয়েছিলাম।’

>

আট বছর আগে মামলা হয়েছে
৩৪ প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ
আটকে থাকা বিনিয়োগ গ্রাহকেরা ফেরত পাচ্ছেন না

আপিল বিভাগের শর্ত ছিল ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন জামিন পাবেন, যদি ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অথবা নগদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা এখনো বহাল। কিন্তু এক টাকাও জমা হয়নি।

মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত ডেসটিনির শীর্ষ দুই কর্তাব্যক্তিকে জামিনে ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের এই সাবেক সাংসদ শামসুল হক ভূঁইয়া। জামিনের জন্য বারবার আবেদন করা হচ্ছে। সূত্রগুলো জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়েও প্রধান অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়ার চিন্তা চলছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুদিন পরপর তাঁদের পক্ষে জামিন চাওয়া হচ্ছে। এতে আদালত বিব্রত হচ্ছেন। দুবার খারিজ হওয়ার পর আবার জামিন চাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

এদিকে হাজতে থাকাকালে বেশির ভাগ সময়ই এমডি রফিকুল আমীন অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে থেকেছেন। এখনো তিনি হাসপাতালে। কখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ), কখনোবা বারডেমে থাকছেন তিনি।

সরকারের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমএলএম পদ্ধতি অবলম্বন করে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা জনগণের কাছ থেকে ৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা পাচারও করেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক এবং পরে আবার আওয়ামী সরকারের আমল মিলিয়ে এক যুগ এভাবে চালানোর পর ডেসটিনি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে ২০১২ সালে।

ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশীদ, এমডি রফিকুল আমীন এবং গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করে দুদক। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ঢাকার কলাবাগান থানায় হওয়া এ মামলার নিষ্পত্তি হয়নি, রফিকুল আমীন এবং মোহাম্মদ হোসাইনও ছাড়া পাননি। হারুন-অর-রশীদ অবশ্য ডেসটিনির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের শর্তে ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে জামিনে রয়েছেন।

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ডেসটিনি গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক তিনি ত্যাগ করেছেন। তবে গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। যেমন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ৪৯ জন শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে ১২ জন ছাড়া কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তাঁরা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারতেন। আর ডেসটিনির সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সে জনবল নেই। ফলে কিছু সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে, কিছু হচ্ছে বিলুপ্ত। সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলো চলতে দেওয়া উচিত।

ডেসটিনির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ

মিথ্যে গুণাবলি বর্ণনা করে নিম্নমানের পণ্য এমএলএম পদ্ধতিতে অস্বাভাবিক উচ্চ দামে বিক্রি করা ছিল ডেসটিনির কাজ। ছাত্র, যুবক, গৃহিণী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও কলেজশিক্ষকেরা ছিল ডেসটিনির মূল গ্রাহক।

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসায়ের বিপজ্জনক দিক নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশই সতর্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ফেডারেট ট্রেড কমিশন (এফটিসি) জনসাধারণকে এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার জন্য ওয়েবসাইটে একটি পৃষ্ঠাই বরাদ্দ রেখেছে। এতে বলা রয়েছে, ‘এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের অর্থ আসবে নতুন পরিবেশকের কাছ থেকে। যার পরিণতি—অসংখ্য শূন্য হাত। যতই কোম্পানিগুলো বলুক না কেন, শেষের দিকের ব্যক্তিরাও লাভবান হবেন, কিন্তু আমরা অসংখ্য মানুষকে পথে বসাবার ঝুঁকি মেনে নিতে পারি না।’

অথচ সেই পদ্ধতির ব্যবসা করেই ডেসটিনি দাঁড় করায় ছোট-বড় ৩৪টি কোম্পানি। এর মধ্যে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন এবং ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো–অপারেটিভ সোসাইটি—এ তিনটির মাধ্যমেই বেশি টাকা আত্মসাৎ করেন ডেসটিনি গ্রুপের কর্তাব্যক্তিরা।

কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা অন্যত্র স্থানান্তর করেন ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা। দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে দুদক মামলার অভিযোগপত্র দেয় ২০১৪ সালের ৫ মে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রুপের ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন নামক কোম্পানিটি ৮১ লাখ গাছ লাগানোর কথা বলে মোট ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা গাছের বিপরীতে সংগ্রহ করলেও বাকি ২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয় গাছ না লাগিয়েই। ২০০৬-০৯ সময়ে তারা এ ঘটনা ঘটায়।

এ ছাড়া নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ চুক্তি অনুযায়ী, ট্রি প্ল্যান্টেশনের কমিশন বাবদ ১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা সরিয়ে নেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

আবার ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ডিএমসিএসএল) মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। অভিযুক্তরা মানুষের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন এবং সেখান থেকে লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা সরিয়ে নেন।

ডেসটিনির লিগ্যাল সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা একসময় শেষ হবে। তাড়াতাড়ি শেষ হলে ভালো হতো। কারণ, সম্পদগুলো নষ্ট হচ্ছে। যদি কোনোভাবে এগুলো রক্ষা করা যেত, বিনিয়োগকারীরা একসময় টাকা ফেরত পেতেন, আর প্রতিষ্ঠানগুলোও সচল থাকত। আমরা চাই, একটি সমাধান আসুক।’

সাহেদ-রফিকুল আমীন একই স্টাইল

প্রতারণা করার অংশ হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতালের মো. সাহেদ যেমন সমাজের উচ্চ শ্রেণির লোকদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো টাঙিয়ে রাখতেন, রফিকুল আমীনও তা–ই করতেন।

মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ডিসি-এসপিদেরও ব্যবহার করেছেন রফিকুল আমীন। তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে জেলা ও উপজেলাসহ সব অফিসে বড় বড় করে টাঙিয়ে রাখতেন তিনি। নতুন গ্রাহক-পরিবেশকদের আস্থা অর্জনের জন্য এ ছিল তাঁর কৌশল। অর্থাৎ সহজ-সরল মানুষদের বোঝানো যে এত বড় বড় প্রভাবশালী মানুষ ডেসটিনির সঙ্গে আছেন।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবসায়ের অংশীদার করে, মাসোহারা দিয়ে এবং সেধে গিয়ে বড় বড় ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্পনসর করাও ছিল ডেসটিনির আরেক কৌশল। মুম্বাইয়ের চিত্রনায়ক শাহরুখ খান ও নায়িকা রানী মুখার্জিকে দেশে এনে অনুষ্ঠানও করেছিল ডেসটিনি।

মন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, উপ-উপাচার্য, ফুটবলার, অধ্যাপক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করিয়েছে ডেসটিনি। ২০১৩ সালে পুলিশের এক প্রতিবেদনেই এসব কথা উঠে এসেছিল।

সম্পদ ২২ জেলায়

আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকেই ডেসটিনির নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব পুলিশের। অর্থাৎ, ডেসটিনির সম্পদের রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়ক পুলিশ। রাজধানীতে থাকা ডেসটিনির সম্পদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং রাজধানীর বাইরের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কথিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজেদের নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ কিনেছেন। এগুলোর মধ্যে বাড়ি, গাড়ি, সিনেমা হল ছাড়াও রয়েছে পাটকল, হিমাগার, টেলিভিশন চ্যানেল ও ধানি জমি।

তবে ডেসটিনির সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে ডিএমপির একটি কমিটি রয়েছে। ‘ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ২০০০ লি. নামক কোম্পানির ক্রোককৃত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও তদারকি সংক্রান্ত আহ্বায়ক কমিটি।’

সম্পত্তিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. সফিকুল ইসলাম এ বিষয়ক কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রান্সপোর্ট) মঈনুল হকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মঈনুল হক গত বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আদালতের দেওয়া দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’ এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি।

ঢাকাসহ দেশের ২২টি জেলায় ডেসটিনির সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ দুই ভাগে বিভক্ত—প্রতিষ্ঠানের নামে ও পরিচালকদের নামে। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন এবং ডেসটিনি গ্রুপের এমডি মো. রফিকুল আমীন, ডেসটিনি ২০০০-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ পরিচালকদের নামে এগুলো কেনা। রাজধানীর বাইরে মুন্সিগঞ্জ জেলায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি সম্পদ। এদিকে ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনেরই ২৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

পুরান ঢাকার ২৫ নম্বর কোর্ট হাউস স্ট্রিট ভবন ও ধানমন্ডিতে রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারাহ দীবার নামে। ঢাকার কল্যাণপুরের দারুস সালাম ও পুরানা পল্টন লাইনের স্থাপনাবিহীন বাড়ি এবং বাংলামোটরে নাসির ট্রেড সেন্টারের ১০ম তলায় রয়েছে পাঁচ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর।

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের নামে সিদ্ধেশ্বরী, খিলগাঁও, গেন্ডারিয়া, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাটারায় প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে।

এ ছাড়া বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে রয়েছে ২৪টি রাবার বাগান। খুলনায় সাত একর জমি, ছয় বিভাগীয় শহরে ডেসটিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার নির্মাণের জমি, কক্সবাজারে জমিসহ নির্মীয়মাণ হোটেল ও গাজীপুরে ডেসটিনি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপনের জন্য জমি রয়েছে। বান্দরবানের লামা থানায় রয়েছে ডেসটিনির সবচেয়ে বেশি রাবার বাগান।

বাংলাদেশে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে জিজিএনের মাধ্যমে। প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে জিজিএনকে তখন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। জিজিএনের প্রথম গ্রাহক ছিলেন রফিকুল আমীন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে বিচারব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা কমে যায়। ডেসটিনির মামলায় যে সাক্ষ্য গ্রহণই শেষ হয়নি, এ জন্য দায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুদক। তাদের কাজ ছিল মামলাকে দ্রুত রায়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাদের গাফিলতির জন্যই মামলার চূড়ান্ত রায় হতে দেরি হচ্ছে। আর এই দেরির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পাওনাদারদের বঞ্চনা আরও বাড়ছে।