উদ্ভাবনে সেরা ২০ কোম্পানি

বিশ্বের সেরা ৫০টি উদ্ভাবনী কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি)। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এ তালিকায় প্রথম নামটি মার্কিন প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকারী অ্যাপলের। 

করপোরেটের নির্বাহী বা আগ্রহী পাঠকের যারা বিসিজির এই তালিকা সম্পর্কে খোঁজ রাখেন, তারা হয়ত ভাবছেন, এ আর নতুন কি! অ্যাপল ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর সেরা উদ্ভাবনী কোম্পানির তালিকায় প্রথম হয়। গতবার শুধু দুই ধাপ পতন হয়েছিল। এবার আবার আগের জায়গায়। 

কথা সেটা নয়, কথা হলো, বছরের পর বছর একটি কোম্পানি কীভাবে বিপুল পণ্য বিক্রি করে? কীভাবে বাজার হিস্যা ধরে রাখে? কীভাবে ক্রেতার মন জয় করে? ‘মোস্ট ইনোভেটিভ কোম্পানিজ রিপোর্ট-২০২০’-এ বিসিজি বলছে, এ জন্য তিনটি বিষয় দরকার। উদ্যোগ, আকার ও দক্ষতা। উদ্যোগ উচ্চাকাঙ্খি লক্ষ্য ঠিক করে এবং সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে অর্থায়ণ নিশ্চিত করে। কোম্পানির আকার সম্ভাবনাকে রাজস্বের বড় উৎসে পরিণত করে। আর দক্ষতা উদ্ভাবন ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, যেখানে কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসতে পারে। 

এ কারণেই অ্যাপল, অ্যালফাবেট (গুগল), অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে তালিকার শীর্ষে থাকে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ এক ঝলকের জন্য সামনে আসে ঠিকই, হারিয়ে যেতেও সময় লাগে না। 

ধারাবাহিক উদ্ভাবন কঠিন। ১৪ বছরে বিসিজির সেরা ৫০’র তালিকায় ১৬২টি কোম্পানি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু একবারের জন্য স্থান পেয়েছিল। ৫৭ শতাংশ তিনবার বা তার কম স্থান পেয়েছে। শুধু ৮টি কোম্পানি প্রতি বছর তালিকায় ছিল। তারা হলো অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, এইচপি, আইবিএম, মাইক্রোসফট, স্যামসাং ও টয়োটা। 

বাংলাদেশের একটা উদাহরণ দিই। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সুগন্ধি সাবানের ব্র্যান্ড লাক্সের কদর দেশজুড়ে। কিন্তু মাঝে একবার হালাল সাবান স্লোগান নিয়ে বাজার মাত করেছিল অ্যারোমেটিক। 

‘হালাল সাবান’ স্লোগানটি ছিল একটি উদ্ভাবন, যা এসেছিল সৈয়দ আলমগীরের মাথা থেকে। সৈয়দ আলমগীর এখন এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অ্যারোমেটিক উদ্ভাবন ধরে রাখতে পারেনি, বাজার থেকেও হারিয়ে গেছে। 

যা-ই হোক, বিসিজি ২০০৫ সাল থেকে সেরা উদ্ভাবনী কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করছে। 

বিসিজি সেরা ৫০টি উদ্ভাবনী কোম্পানির তালিকা তৈরিতে আড়াই হাজারের বেশি নির্বাহীর মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে। চারটি মানদণ্ডের নিরিখে মূল্যায়ণ করা হয়—বিশ্বজুড়ে গ্রাহক ও ভোক্তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতে উদ্ভাবন, খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংশ্লিষ্ট খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। 

এ বছর এক্ষেত্রে নতুন করে আরো একটি মাপকাঠি যুক্ত করেছে বিসিজি, তা হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈচিত্র্যময়তা এবং নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। পাশাপাশি ব্যবসায়িক খাতের প্রতিকূলতা দূর করতে নিজেদের সক্ষমতা এবং নিজদের সেবার বাহিরে গিয়ে অন্য পণ্য বা সেবাখাতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়। 

সেরার তালিকায় এ বছর সবচেয়ে বড় ভেলকি দেখিয়েছে চীনের তথ্যপ্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে। এক বছরে ৪২ ধাপ এগিয়ে হুয়াওয়ে পেয়েছে ৬ নম্বর অবস্থান। 

দেখে নিন সেরা ৫০’র ২০

২০২০ পরিবর্তন দেশ 

১. অ্যাপল +২ যুক্তরাষ্ট্র

২. অ্যালফাবেট (গুগল) -১ যুক্তরাষ্ট্র

৩. আমাজন -১ যুক্তরাষ্ট্র

৪. মাইক্রোসফট … যুক্তরাষ্ট্র

৫. স্যামসাং … দ. কোরিয়া

৬. হুয়াওয়ে +৪২ চীন

৭. আলিবাবা +১৬ চীন

৮. আইবিএম -১ যুক্তরাষ্ট্র

৯. সনি ফেরত জাপান

১০. ফেসবুক -২ যুক্তরাষ্ট্র

১১. টেসলা -২ যুক্তরাষ্ট্র

১২. সিসকো সিস্টেমস +৫ যুক্তরাষ্ট্র

১৩. ওয়ালমার্ট +২৯ যুক্তরাষ্ট্র

১৪. টেনসেন্ট ফেরত চীন

১৫. এইচপি ইনক. +২৯ যুক্তরাষ্ট্র

১৬. নাইকি ফেরত যুক্তরাষ্ট্র

১৭. নেটফ্লিক্স -১১ যুক্তরাষ্ট্র

১৮. এলজি ইলেকট্রনিকস … দ. কোরিয়া

১৯. ইন্টেল ফেরত যুক্তরাষ্ট্র

২০. ডেল +২১ যুক্তরাষ্ট্র