ঢাকার বাজারে আলু ৪০ টাকা কেজি, দাম ৬৭% বেশি

মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে উচ্চবিত্তের পাতে আলু অপাঙ্‌ক্তেয়। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে আলুর কদর অনেক। বিশেষ করে বাজারে অন্য সবজির দাম যখন লাগামছাড়া, তখন আলুই ভরসা। এখন সেই আলু কেনারও জো নেই। দাম ব্যাপক চড়া।

ঢাকার বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। কোনো কোনো বাজারে সাধারণ মানের আলু ৩৫ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে আলুর দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি। সংস্থাটি বলছে, এক মাসে পণ্যটির দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

মৌসুম শুরুর পর বাজারে আলু সাধারণত ২০ টাকা কেজির মধ্যে থাকে। শীতের আগে যখন মজুত শেষের দিকে থাকে, তখন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। এবার প্রবণতা ভিন্ন। গত মার্চে যে আলু হিমাগারে ঢুকেছিল, চার মাস পেরোতেই সেটা কেজি প্রতি ৪০ টাকায় উঠে গেছে। নতুন মৌসুমের আলু পুরোদমে বাজারে আসতে আরও পাঁচ মাস বাকি।

দেশে মৌসুম শেষে হিমাগারগুলোতে আলু রাখা হয়। সেই আলু বছরজুড়ে বিক্রি হয় বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মৌসুমে আলুর
উৎপাদন কম হয়েছে। তাই হিমাগারে রাখা হয়েছে তুলনামূলক কম।

হিমাগারের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন দাবি করলেন, এ বছর মৌসুম চলাকালেই আলুর দাম বেশি ছিল। যেসব আলু হিমাগারে রাখা হয়েছে, তা প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা দর পড়েছে। হিমাগারে রাখার খরচসহ কেজিপ্রতি ব্যয় ২২-২৩ টাকা। তিনি বলেন, তিন বছর কৃষকেরা লোকসান দিয়েছে। ফলে গত মৌসুমে আবাদ কম হয়েছিল। ফলনও কম হয়েছে। দেশে ৩১০টি হিমাগারে প্রায় ৩০ লাখ টন আলু এখনো মজুত আছে বলে জানান মোশারফ হোসেন।

দেশে গত মৌসুমে কী পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে, তার হিসাব এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ফলে জানা যায় না, মোশারফ হোসেনের দাবি সঠিককি না।

বিবিএসের হিসাবে, দেশে বছরে ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বলছে, গত মৌসুমে ১ কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। অবশ্য আলু উৎপাদনের চূড়ান্ত হিসাবটি বিবিএস ও ডিএই মিলে করে।

>

চাল, ডাল ও ডিমের দামও চড়া
নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে
ভারত ও নেপালে দাম বেশি
আলু রপ্তানিও বেড়েছে

কারওয়ান বাজারের আলুর পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্রের এক নম্বর আড়তের ব্যবস্থাপক মো. হানিফও দু-তিন মৌসুমে লোকসানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে চাষি ও ফড়িয়ারা হিমাগারে আলু কম রেখেছেন। বেশি রেখেছেন বড় ব্যবসায়ীরা। তাঁরা এখন আলুতে ব্যাপক মুনাফা করছেন। তিনি দাবি করেন, এসব আলু কেনা ও হিমাগারে রাখতে খরচ পড়েছে প্রতি কেজি ১২ টাকার আশপাশে।

আড়তে আলু বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৩০ টাকা। সাধারণ মানের আলুর কেজি ২৮ টাকা। কমিশন, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহন খরচ ও ঘাটতি যোগ করে রাজধানীর কাজীপাড়া বাজারে আলুর কেজি দাঁড়াচ্ছে ৪০ টাকা।

এদিকে আলু রপ্তানিও বেড়েছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলারের আলু রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও নেপালে আলুর দাম অনেক বেশি। এ কারণে বাংলাদেশি আলুর কদর বেড়েছে। বাংলাদেশ আলু রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ ভর্তুকি দেয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও মালদ্বীপে আলু রপ্তানি বেড়েছে।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় গতকাল মঙ্গলবারের এক খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৮ থেকে ৩২ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ থেকে ৩৬ টাকা। ২২ দিন আগে রাজ্য সরকার পাইকারি বাজারে দাম বেঁধে দিয়েও আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

নেপালি ওয়েবসাইট কাঠমান্ডু টুডে–এর তথ্য অনুযায়ী, সেখানে পাইকারি বাজারে আলুর দর বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা।

দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকের পরিবারেই দুটি ডিম আর দুটি আলুতে এক বেলার খাবার হয়ে যায়। সঙ্গে ডাল। বাজারে এখন মোটা চাল, মসুর ডাল, ডিম, আলু—সবকিছুর দামই চড়া। ফলে বিপাকে আয় কমে যাওয়া সাধারণ মানুষ। টিসিবি বলছে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় মোটা চালের কেজিপ্রতি দর ১৮ শতাংশ ও মোটা মসুর ডালের দাম ২৬ শতাংশ বেশি। ডিমের দাম গত বছরও চড়া ছিল। এখনো চড়া। প্রতি হালি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা।

বাজারদর ভোগাচ্ছে মো. নুরুন্নবীকে। মিরপুরের ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করে আগের মতো আয় হচ্ছে না। কিন্তু বাজার খরচ বেশি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে দিন শেষে ৬০০ টাকা নিয়ে ঘরে যাওয়া যেত। এখন সেটা অর্ধেক। স্ত্রী তিনটি বাসায় কাজ করত, এখন দুই বাসায় কাজ থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।

বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে নুরুন্নবী আরও বলেন, বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজি ৬০ টাকা কেজি। কম দাম ছিল আলুর। সেটাও লাগামছাড়া।