পর্ষদ পুনর্গঠন, নইলে পর্যবেক্ষক

শেয়ারবাজারের মন্দ কোম্পানির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারই অংশ হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত মন্দ কোম্পানির সব উদ্যোক্তা–পরিচালকের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর ও প্লেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ জেড শ্রেণির কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা এখন থেকে তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন না। এ ছাড়া যেসব কোম্পানি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত রয়েছে, সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিএসইসি জানিয়েছে, ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত সব কোম্পানিকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে হবে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর যেসব কোম্পানি শেয়ারধারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় না, এজিএম করে না সেগুলোকে বাজে মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। জেড শ্রেণির শেয়ারকে সাধারণভাবে জাঙ্ক শেয়ার হিসেবে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত ৫৩টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় বিএসইসির বর্তমান কমিশন। সে জন্য নতুন করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কোম্পানি দুই বছরের বেশি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত রয়েছে, ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। কোনো কোম্পানি যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তবে ওই কোম্পানির বর্তমান পরিচালক ও উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না। যেসব কোম্পানি ৪৫ দিনের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনে ব্যর্থ হবে সেসব কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক বসাবে বিএসইসি। বিশেষ নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক বসিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে।

>

জেড শ্রেণির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হবে তিন দিনে
বিবিএস কেব্লসের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ৮ কোটি টাকা জরিমানা
সূচক ও লেনদেনের বড় উত্থান শেয়ারবাজারে

বিএসইসি আরও বলছে, পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর চার বছরের মধ্যে কোম্পানির অবস্থার উন্নতি না হলে সে ক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত করা হবে। এ ছাড়া ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডার সভায় (এজিএম বা ইজিএম) ই–ভোটিং ও অনলাইন ভোটিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে করতে হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

দুই বছর লভ্যাংশ না দিলেই ‘জেড’ শ্রেণিতে

স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আইন সংশোধন করে ‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানির জন্য নতুন নিয়ম করা হয়েছে। বিএসইসি বলছে, এখন থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর শেয়ারধারীদের নগদ লভ্যাংশ না দিলে ও এজিএম করতে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হবে। বর্তমানে কোনো কোম্পানি কোনো এক বছর লভ্যাংশ দিতে না পারলে ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এখন সেখানে পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশে দিতে না পারলে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার নতুন বিধান করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কোম্পানির উৎপাদন বা পরিচালনা কার্যক্রম ছয় মাসের বেশি বন্ধ থাকলে, পরপর দুই বছর নিট লোকসান বা পরিচালনা কার্যক্রম থেকে নগদ অর্থ না এলে, কোনো কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি হলে ওই সব কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া এখন থেকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির লেনদেন নিষ্পন্নের সময় কমিয়ে তিন দিন করা হয়েছে। বর্তমানে ‘জেড’ শ্রেণির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতে ৯ দিন সময় লাগে। 

বিবিএস কেব্‌লসের কর্মকর্তাদের জরিমানা  

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির কারণে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের স্ত্রী খাদিজা তাহেরা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু নোমান হাওলাদার, এমডির ভাই আবু নঈম হাওলাদার, এমডির নিকটাত্মীয় ফরহাদ হোসেন, কোম্পানির মনোনীত পরিচালক সৈয়দ ফেরদৌস রায়হান কিরমানিসহ ১০ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে সময়মতো কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করায় কোম্পানির সব পরিচালককে (স্বতন্ত্র ব্যতীত) ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানি সচিবের স্ত্রী সৈয়দাতুন নেছা ও কোম্পানির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ফাইজুজ্জামানকে সতর্ক করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে। আর এমডিকে করা হয়েছে ১ কোটি টাকার জরিমানা। ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আবদুল কাইয়ুম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে। এমডির নিকটাত্মীয় ফরহাদ হোসেনকে ৩০ লাখ, এমডির ভাইকে ১০ লাখ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস প্রুডেনশিয়াল ক্যাপিটালকে ৫৫ লাখ, হাসান জামিলকে ৩৫ লাখ, সৈয়দ আনিসুর রহমান, নজরুল ইসলাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ও কবীর আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

বাজারচিত্র

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবারও সূচক ও লেনদেনে বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৭০ পয়েন্ট
বা দেড় শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক সূচকটি বেড়েছে ১৯৬ পয়েন্ট বা প্রায় দেড় শতাংশ। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৮ কোটি টাকা বেশি। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ৩৫ কোটি টাকার, যা আগের দিনের সমপরিমাণ।