হঠাৎ আসা টাকা হঠাৎ করে চলে যাবে না তো

দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরেছে। ঈদুল আজহার আগে শুরু হওয়া বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়ে ৪ হাজার ৮০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। মন্দা বাজারে গতি ফিরে আসা বিনিয়োগকারীদের জন্য অবশ্যই স্বস্তির। তবে নতুন করে বিনিয়োগের আগে সতর্কও থাকতে হবে। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার করণীয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। অনুলিখন করেছেন সুজয় মহাজন।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী
ছবি: প্রথম আলো

অনেক দিন পর শেয়ারবাজারে কিছুটা প্রাণসঞ্চার হয়েছে, এতে আমি খুশি। অপ্রত্যাশিতভাবে বাজার অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। আমরা দেখেছি বিনিয়োগকারীরা চরম আস্থাহীনতার মধ্যে ছিলেন। সেই অবস্থা থেকে বাজারে গত কিছুদিনে কিছুটা প্রাণসঞ্চার হয়েছে, এটা ভালো খবর সবার জন্য। সূচকের পাশাপাশি হঠাৎ করে বাজারে লেনদেন বেশ বেড়েছে, এ কারণে আমি কিছুটা চিন্তিতও। আমি বুঝতে পারছি না, হঠাৎ করে বাজারে এত টাকা কোথায় থেকে আসছে। যে বাজারে কয়দিন আগে ১০০ কোটি টাকারও লেনদেন হচ্ছিল না, সেখানে হঠাৎ করে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাজারে কোথা থেকে টাকা আসছে তা সুনির্দিষ্ট করে জানা আমার পক্ষে এখন সম্ভব না।কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত নিজেদের প্রয়োজনে সেটা খতিয়ে দেখা।খতিয়ে দেখা জরুরি এ কারণে যে, এ টাকা কেন ও কীসের জন্য বাজারে আসছে সেটি জানা-বোঝা দরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার। তা না হলে হঠাৎ আসা টাকা যদি হঠাৎই চলে যায়,তাতে বাজার আবারও খারাপ অবস্থায় চলে যেতে পারে। সেটি তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাথাব্যথার কারণ হবে।

আরও পড়ুন

তবে আমি এটা মনে করি, বাজার বর্তমানে যেখানে রয়েছে সেখানে সার্বিকভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।কারণ এখনো অনেক শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। তবে যেভাবে বাছবিচার ছাড়া সব শেয়ারের দাম বাড়ছে, সেটি উদ্বেগের। তাই বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের এখন সতর্ক থাকতে হবে। ভালো শেয়ারে বিনিয়োগই বিনিয়োগকারীদের জন্য একমাত্র রক্ষাকবচ। কারসাজির কারণে খারাপ শেয়ারের দাম যেমন দ্রুত বাড়ে তেমনি কমার সময়ও তা দ্রুত কমে। আবার ওসব শেয়ার থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ঊর্ধ্বমুখী বর্তমান বাজারে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগই বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

অনেকে বলছেন, করোনার কারণে ব্যবসা মন্দা, তাই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একটি অংশ শেয়ারবাজারমুখী হয়েছেন। আবার ব্যাংকের বিনিয়োগও বাড়ছে বাজারে। এটি শেয়ারবাজারের জন্য ভালো খবর হলেও দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখবর নয়।কারণ শিল্প খাত, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা মানে মন্দার আশঙ্কা।
তাই বাজারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ, যে টাকা আসছে, তা স্বল্পকালীন লাভের জন্য নাকি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ হচ্ছে। স্বল্পকালীন হলে বাজারের ক্ষতি আর দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ হলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।