ভোটাভুটি ছাড়াই হয়ে গেল বিআইএর নির্বাচন

সমঝোতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলো দেশের বেসরকারি বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নির্বাচন।
বিআইএ সূত্র জানায়, এই নির্বাচন করার জন্য প্রতিবছরই একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে বিআইএ। সেই বোর্ড ধারাবাহিকভাবে সব প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত সরাসরি নির্বাচন আর হয় না। ১৯৮৮ সালে বিআইএ গঠনের পর থেকে সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।
বিআইএর কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল আগামী ১০ ডিসেম্বর। সদস্যদের ভোটে পরদিন ১১ ডিসেম্বর নির্বাচিত হবেন সংগঠনের সভাপতি ও সহসভাপতি—এমনই জানিয়েছিল নির্বাচনী বোর্ড।
কিন্তু হঠাৎ গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিআইএ জানায়, ওই দিনই নির্বাচন হয়ে গেছে এবং ২০১৫-১৬ সময়ের জন্য সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন সভাপতি ও সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহসানুল ইসলাম সহসভাপতি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন আহমেদ।
সাধারণ বিমা (নন-লাইফ) ও জীবন বিমা মিলিয়ে দেশে বর্তমানে ৭৪টি বেসরকারি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে বিআইএর সদস্য ৭২। আর বিআইএর কমিটি ১৫ সদস্যবিশিষ্ট, যার মধ্যে জীবন বিমা থেকে সদস্য পাঁচ ও সাধারণ বিমা থেকে ১০।
নির্বাচনের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই, বৈধ মনোনয়নপত্র প্রকাশ, মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে নির্বাচনী বোর্ডের কাছে আপিল, আপিলের ওপর শুনানি ইত্যাদির পর গত ২৪ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও ২৫ নভেম্বর চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের দিন। নির্বাচনের পর ফলাফলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল, ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি এবং ১৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা—এটাই ছিল নির্বাচনী বোর্ডের পরিকল্পনা।
জানতে চাইলে নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ সদস্যের কমিটির নির্বাচনের জন্য ২০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। শেষ দিন প্রত্যাহার করে নেন পাঁচজন। এতে অন্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।’
বিআইএর সংঘবিধি অনুযায়ী বর্তমানে একজন পর পর তিনবার সভাপতি হতে পারেন। সে হিসেবে শেখ কবির হোসেন ও আহসানুল ইসলাম আগামীবার নির্বাচিত হতে পারবেন না।
নির্বাহী কমিটির অন্য ১৩ সদস্যের মধ্যে নয়টি কোম্পানির চেয়ারম্যান রয়েছেন। তাঁরা হলেন রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের মাহফুজুর রহমান, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, নিটল ইনস্যুরেন্সের এ কে এম মনিরুল হক, মার্কেন্টাইল ইনস্যুরেন্সের এম কামাল উদ্দিন, সান লাইফের রুবিনা হামিদ, প্রাইম ইনস্যুরেন্সের ফেরদৌস আমিন, ইসলামী ইনস্যুরেন্সের তোফাজ্জাল হোসেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নজরুল ইসলাম ও স্বদেশ লাইফের নুরুল আলম চৌধুরী।
নতুন কমিটির অন্য চার সদস্য কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ, ফেডারেল ইনস্যুরেন্সের এমডি এ কে এম সরওয়ারদি চৌধুরী, রূপালী ইনস্যুরেন্সের এমডি পি কে রায় এবং পিপলস ইনস্যুরেন্সের এমডি মোহাম্মদ হোসেন খালেদ।
জানতে চাইলে শেখ কবির প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি না হয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে হয়ে আসছে—বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তিনি।
গণতান্ত্রিক চর্চার দিক বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টিকে বাঁকাভাবে দেখছেন বিমা খাতের অনেকেই—এমন প্রসঙ্গে শেখ কবির বলেন, সে সুযোগ নেই, কারণ এফবিসিসিআই ছাড়া দেশের প্রায় সব অ্যাসোসিয়েশনেরই কমিটি এভাবে হয়ে থাকে।