গাড়িশিল্পের জন্য দরকার সরকারের নীতি-সহায়তা

দেশের অটোমোবাইলস বা গাড়ির বাজারের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন উত্তরা গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান

মতিউর রহমান
মতিউর রহমান

প্রথম আলো: দেশের অটোমোবাইলস বা গাড়ির ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কী?
মতিউর রহমান: দীর্ঘদিন ধরে গাড়ির ব্যবসায় কিছুটা মন্দাভাব চলছিল। গত বছরের শেষ দিকে এসে এ ব্যবসায় কিছুটা গতিসঞ্চার হয়। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসাটি একেবারে তলানিতে চলে যায়। এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। তাই আশা করছি, চলতি মাস থেকে খাতটি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
প্রথম আলো: সামনে বাজেট। প্রতিবছর বাজেটকে কেন্দ্র করে গাড়ির দামের ওঠা-নামা হয়। এবারও কি সেটির পুনরাবৃত্তি ঘটবে?
মতিউর রহমান: আমাদের দেশে গাড়ির দাম ওঠা-নামা করে প্রধানত শুল্কহারের কারণে। সরকার যদি শুল্কহার কমায়, তাহলে গাড়ির দাম কমবে। আবার শুল্ক বাড়ালে দামও বাড়বে। গাড়ির ওপর সরকার যে হারে শুল্ক বাড়াচ্ছে তাতে তা মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এ দাম যেন নাগালের মধ্যে থাকে তাই সরকারের কাছে শুল্ক কমানোর দাবি জানাই।
প্রথম আলো: গাড়ির দাম কমানোর জন্য আগামী বাজেটে আপনাদের প্রস্তাব কী?
মতিউর রহমান: বাজেট সামনে রেখে ইতিমধ্যে আমরা সরকারের কাছে আমাদের লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছি। বর্তমানে ৮০০ সিসি থেকে ১৫০০ সিসির ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির ওপর প্রায় ১৩১ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক আরোপ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি, ৪৫ শতাংশ সম্পূরক ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক। এর বাইরে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট রয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে আমরা বলেছি, ৮০০ থেকে ১২০০ সিসির ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ির জন্য আলাদা একটি স্তর করে তাতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। কারণ, ৮০০ থেকে ১২০০ সিসির মধ্যে পারিবারিক ব্যবহার উপযোগী নতুন অনেক গাড়ি পাওয়া যায়।
প্রথম আলো: যদি সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাই, শুল্ক কমানো হলে একটি মধ্যবিত্ত পরিবার কত টাকার মধ্যে একটি কার কিনতে পারবে?
মতিউর রহমান: বর্তমানে ৮০০ থেকে ১২০০ সিসির ইঞ্জিন ক্ষমতার নতুন গাড়ি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সরকার যদি ২০ শতাংশ শুল্ক কমায়, তাহলে দাম ২৫ শতাংশ কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে এসব গাড়ির দাম নেমে আসবে সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকায়।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে গাড়ির বাজারটি কত বড়?
মতিউর রহমান: নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে গত বছর দেশে বিভিন্ন ধরনের আড়াই লাখের বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। পাঁচ বছর আগেও গাড়ির বাজারটি ছিল এর অর্ধেক। সেই হিসাবে বলা যায়, পাঁচ বছরে এ বাজারটির পরিধি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটরসাইকেলের বাজারটি।
প্রথম আলো: দেশে কেন নতুন গাড়ি তৈরির শিল্প গড়ে উঠছে না?
মতিউর রহমান: একটি নতুন গাড়িশিল্প গড়ে তুলতে হলে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ দরকার। এ বিনিয়োগেও কোনো সমস্যা নেই। অনেকেই বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী। সমস্যাটি অন্য জায়গায়। আমাদের গাড়ির বাজার দখল করে আছে রিকন্ডিশন্ড বা ব্যবহৃত পুরোনো গাড়ি। এসব গাড়ি কম দামে পাওয়া যায়। তাই নতুন গাড়ির চাহিদা কম। আমার জানামতে, গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে নতুন গাড়ি ছিল মাত্র আড়াই হাজার। তা থেকেই বোঝা যায়, নতুন গাড়ির চাহিদা কেমন। তাই কোনো বিনিয়োগকারী এ শিল্পে বিনিয়োগে সাহস দেখাচ্ছেন না। তা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের পিএইচপি গ্রুপ নতুন গাড়ি সংযোজন শিল্প গড়ে তুলছে। আমি মনে করি এটি খুবই সাহসী একটি পদক্ষেপ। আমরাও এতে আগ্রহী।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সুজয় মহাজন