প্রথম প্রান্তিকেই রাজস্ব আদায়ে হোঁচট

.
.

রাজস্ব আদায়ে বছরের শুরুতেই বেশ পিছিয়ে গেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের কাঁধে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্য রয়েছে। এনবিআরের আপত্তি সত্ত্বেও এ লক্ষ্য চাপিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা অর্জনে প্রথমেই হোঁচট খেল এনবিআর। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আয়ে ঘাটতি ৫ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা।
এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আয়করসহ সব মিলিয়ে আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এই সময়ে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এনবিআরের। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলো এনবিআর। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
গত অর্থবছরের লক্ষ্য অর্জনের পর এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে এ খবরটি জানিয়েছিলেন। পরে সংবাদ সম্মেলনেও এনবিআরের চেয়ারম্যান চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় ‘অর্জনযোগ্য’ বলে মত দিয়েছিলেন।
গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় বেশি হওয়ার মতো বেশ কিছু উপলক্ষ ছিল। এ সময়ে দুটি ঈদ উৎসব উদ্‌যাপিত হয়েছে। উৎসবে বেচাকেনা বেশি হয়, তাই রাজস্ব আদায়ের বেশি সুযোগ থাকে। আবার উৎপাদন পর্যায়েও বেশি রাজস্ব আদায় হয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এবার ২০ হাজার কোটি টাকার মতো বেশি লক্ষ্য ধরা হয়েছে। তাই বছর শেষে ১৮-২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে আমদানি বাড়েনি। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে প্রথম প্রান্তিকের রাজস্ব আদায়ে।’
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘অনেক ব্যাংকের মুনাফা কমে গেছে। আবার গ্রামীণফোনের মতো বৃহৎ করদাতার মুনাফা কমেছে। এসব কারণে প্রথম প্রান্তিকে খুব বেশি প্রবৃদ্ধি নেই।’ তিনি মনে করেন, এনবিআরের বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুন-জুলাই সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। অথচ এ বছর ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

 আদায় পরিস্থিতি: এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক আদায়ের পরিমাণ ৯ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এ খাতে আদায় হয়েছিল ৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা।

স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণত মূল্য সংযোজন কর, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও টার্নওভার ট্যাক্স আদায় করা হয়। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। গতবার একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

আয়কর, ভ্রমণ করসহ প্রত্যক্ষ কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এ খাতে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে আদায় হয় ৮ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।