বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু আজ

বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করে সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নামে নতুন একটি সংস্থা গঠন করেছে। বেসরকারি খাতকে বেগবান করতে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে সংস্থাটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, আজ বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে বিডার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।

নতুন সংস্থা গঠনের মাধ্যমে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশন বিলুপ্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ ও বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। এত দিন এ দুজন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

নতুন আইনের বলে গঠিত বিডা নিজেই এখন ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের সরকারি শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছাড়তে পারবে। তবে ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের শিল্প বা প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করতে হলে তা নিয়ে যেতে হবে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে।

আবার বিদেশে নিবন্ধিত বেসরকারি বাণিজ্যিক কোম্পানির বাংলাদেশ শাখা, লিয়াজোঁ ও রিপ্রেজেনটেটিভ অফিস স্থাপনের ক্ষেত্রে এখন থেকে নতুন সংস্থাটির অনুমোদন নিতে হবে।

সরকারি লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৩ সালে প্রথমে বেসরকারীকরণ বোর্ড এবং ২০০০ সালে ওই বোর্ডকেই বেসরকারীকরণ কমিশনে রূপান্তর করে সরকার। অন্যদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় বিনিয়োগ বোর্ড।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থা দুটি পরিচালিত হয়ে আসছিল দুজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে, যাঁদের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু উভয় সংস্থাই তাদের গঠনের উদ্দেশ্য পূরণে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছিল না। এ নিয়ে সমালোচনাও ছিল।

ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করার নির্দেশ দেয়। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল গঠন করা হয় সাত সদস্যের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি। এরপর কমিটির প্রণয়ন করা আইন মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ পাস হয় সংসদে।

গতকাল পর্যন্ত বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ছিলেন এস এ সামাদ এবং বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান।

এদিকে গত রোববার বিডার প্রথম নির্বাহী চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী মো. আমিনুল ইসলামকে। সংস্থার ১৭ সদস্যের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী, ভাইস চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী। শিল্প, বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, বস্ত্র, পরিকল্পনা, কৃষি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রীও থাকবেন বোর্ডে। এ ছাড়া থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, স্বরাষ্ট্রসচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও বিশেষায়িত দুটি চেম্বারের সরকার-মনোনীত প্রতিনিধি। 

বিডায় ১৯ জন পরিচালক, ২৮ জন উপপরিচালক ও ৩৮ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন থাকবেন সংস্থার সচিব। জানা গেছে, এ দুই সংস্থার সব কর্মচারী বিডার জনবল হিসেবে যুক্ত হবেন।

জানা গেছে, বিনিয়োগে ও লোকসানি কারখানা বেসরকারি খাতে বিক্রিতে প্রধান সমস্যা দুটি—আগ্রহী বিনিয়োগকারীকে চাহিদা অনুযায়ী জমি দিতে না পারা, রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি কারখানা বিক্রি করতে না পারা।

কর্মকর্তারা আরও জানান, বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বোর্ড কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি নেতৃত্ব, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে। আর বেসরকারীকরণ কমিশন পারেনি মূলত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিরোধিতার কারণে।

জানা গেছে, শেষ কর্মদিবসে গতকাল বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদায় নেন। একইভাবে বিদায় নেন মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানও।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ বোর্ডের ১৪ তলা নিজস্ব ভবনের কাজ চলছে। জানা গেছে, এই ভবনই হবে বিডা ভবন। তবে ভবনের কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দিলকুশায় জীবন বীমা করপোরেশনের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া বিনিয়োগ বোর্ডের ফ্লোরগুলোও থাকবে। সচিবালয়ের পাশে পরিবহন পুল ভবনে বেসরকারীকরণ কমিশনের যে কার্যালয় রয়েছে, তা-ও থাকবে আপাতত। তবে দুই ভবনেই নতুন সাইনবোর্ড উঠবে আজ থেকে।

বিডার নতুন চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বিদেশে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর দেশে ফেরার কথা।