এইচএসসি ২০২২ - ভূগোল ১ম পত্র | অধ্যায় ২ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ২

সৃজনশীল প্রশ্ন

মার্চ মাসের কোনো একদিন ঢাকায় প্রচণ্ড গরম পড়ল। বিকেলের দিকে আকাশে ঘন কালো মেঘ সৃষ্টির ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো। বৃষ্টির পর আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে গেল। এ রকম বৃষ্টিপাত প্রায়ই হয়ে থাকে। অন্যদিকে সিলেটে মাঝে মাঝে পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

প্রশ্ন

ক. আবহাওয়া কী?

খ. বৃষ্টিপাত কত প্রকার ব্যাখ্যা করো।

গ. সিলেটে যে প্রকারের বৃষ্টি হয়ে থাকে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ঢাকায় যে বৃষ্টি হয়েছিল তার পর্যায়গুলো বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুর তাপ, চাপ, আদ্র৴তা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহের দৈনন্দিন সামগ্রিক অবস্থাই উক্ত স্থানের আবহাওয়া।

খ. মেঘ ঘনীভূত হয়ে পানি বিন্দুতে পরিণত হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসাই বৃষ্টিপাত। প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে বৃষ্টিপাত চার প্রকার। যথা পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ, ঘূর্ণিঝড় ও সংঘর্ষ বৃষ্টিপাত।

গ. সিলেট জেলায় যে বৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুর গতিপথে পর্বত থাকলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত হয়। শৈল বা পাহাড় দ্বারা উৎক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত হয় বলে একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic rain) বলে। সমুদ্র উপকূলের নিকটবর্তী অঞ্চলে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি থাকলে নিকটবর্তী উষ্ণ সমুদ্র থেকে আগত জলীয়বাষ্পম্পূর্ণ বায়ু এই উচ্চ ভূমিতে ধাক্কা খায় এবং ওপরে উঠতে থাকলে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই অংশকে প্রতিবাত পার্শ্ব বলে। উচ্চ ভূমি অতিক্রম করে বায়ু অপর পার্শ্বে অর্থাৎ অনুবাত পার্শ্বে পৌঁছালে এতে জলীয়বাষ্প আর থাকে না বলে বৃষ্টি খুব কম হয়। এ অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rain shadow area) বলে। পর্বতের অনুবাত পার্শ্বের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সাধারণভাবে শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। যেমন গ্রীষ্মে হিমালয়ের প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত মঙ্গোলিয়ায় বৃষ্টিপাত হয় না।

ঘ. উদ্দীপকে ঢাকায় পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
সূর্যকিরণের প্রভাবে বায়ু উত্তপ্ত ও প্রসারিত হয়ে ওপরে ওঠে এবং শীতল হয়ে পড়ে। বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাসের ফলে অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত হয়, তাকে পরিচলন বৃষ্টি (Convectional Rainfall) বলে। কয়েকটি পর্যায় অনুসরণ করে পরিচলন বৃষ্টি সংঘটিত হয়। যথা:
i. প্রচণ্ড সূর্যকিরণে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ii. ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থ বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে পরিচলনের সৃষ্টি করে।
iii. ঊর্ধ্বমুখী বায়ু শুষ্ক রুদ্ধ তাপ হ্রাস হারে (Dry adiabatic lapse rate) শীতল হতে থাকে এবং বায়ুতে যথেষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিতে তা ঘনীভবন হতে থাকে।
iv. ঘনীভবনের ফলে মেঘ ওপরের দিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পুঞ্জ মেঘের (Cumulus clouds) সৃষ্টি করে। এ ধরনের মেঘ থেকে ঝড়সহ মুষলধারে বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতও হয়ে থাকে।

সুতরাং বলা যায়, উল্লিখিত পর্যায়গুলো অনুসরণ করেই ঢাকায় পরিচলন বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।

পূর্ববর্তী দিনের প্রকাশিত সৃজনশীল প্রশ্ন