এসএসসি ২০২২ - ভূগোল ও পরিবেশ | অধ্যায় ৬ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৬

ডালিয়া মা–বাবার সঙ্গে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়ে দেখল, দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় একটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। ডালিয়া লক্ষ করল, সমুদ্রের পানি হঠাৎ ফুলে উঠতে শুরু করেছে এবং জাহাজটি দ্রুত বন্দরে প্রবেশ করছে।

প্রশ্ন

ক. মহীসোপান কাকে বলে?

খ. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করো।

গ. ডালিয়ার দেখা সমুদ্রের পানিতে পারিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করো।

ঘ. মানবজীবনে পানির এরূপ পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. সমুদ্রের উপকূল রেখা থেকে তলদেশের দিকে ক্রমনিম্ন নিমজ্জিত অংশকে মহীসোপান বলে।

খ. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো নিয়ত বায়ুপ্রবাহ। এসব বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের দিক ও গতি নিয়ন্ত্রণ করে। অয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী প্রধান সমুদ্রস্রোতগুলোর সৃষ্টি হয়।

গ. ডালিয়া সমুদ্রের পানিতে যে পরিবর্তনটি দেখতে পেয়েছিল, তা হচ্ছে জোয়ার–ভাটার জোয়ারের প্রক্রিয়া। জোয়ারের কারণে সমুদ্রের পানি ফুলে উঠতে থাকলে নদীর মোহনায় দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজটি দ্রুত বন্দরে প্রবেশ করে। মূলত দুটি কারণে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। যথা:

১. মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব: মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। সূর্যের ভর অপেক্ষা চাঁদের ভর অনেক কম হলেও চাঁদ সূর্য অপেক্ষা পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থিত বলে চাঁদের আকর্ষণেই প্রধানত সমুদ্রের তরল জল ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়।

চিত্র: জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ ও মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব

২. কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব: পৃথিবীর নিজ মেরুরেখার চারদিকে আবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যেখানে মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে।

ঘ. মানবজীবনে জোয়ার-ভাটার যথেষ্ট প্রভাব আছে।

বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে ভূখণ্ড থেকে আবর্জনাসমূহ নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয়। জোয়ার-ভাটার ফলে সৃষ্ট স্রোতের সাহায্যে নদীখাত গভীর হয়। নদীর পানি তাই নির্মল থাকে। বহু নদীতে ভাটার স্রোতের বিপরীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উত্পাদন করা হয়।

জোয়ারের পানি নদীর মাধ্যমে সেচে সহায়তা করে এবং অনেক সময় খাল খনন করে জোয়ারের পানি আটকে সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। জোয়ার-ভাটার ফলে নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মানবজীবনে জোয়ার–ভাটার প্রভাব ব্যাপক।

উল্লেখ্য, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে অধিক মাত্রায় জোয়ারের সময় নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জানমালের ক্ষতি হয়।

মো. শাকিরুল ইসলাম, প্রভাষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

এই অধ্যায়ের প্রকাশিত পরবর্তী সৃজনশীল প্রশ্ন