কোচিং বন্ধ না করে শৃঙ্খলায় আনতে চান শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
ফাইল ছবি

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে দেখা হয় শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেটকে। সারা দেশেই কোচিং-প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একধরনের বিকল্প হয়ে উঠছে। এই কোচিং-প্রাইভেট নিয়ে অনেক অনৈতিক ঘটনাও ঘটছে। অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে কৌশল করে শিক্ষার্থীদের নিজ কোচিং-প্রাইভেটে পড়তে বাধ্য করার অভিযোগও আছে। এমন অবস্থায় শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেট বন্ধ করার দাবি উঠেছে বহুদিন ধরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এর আগে শিক্ষকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবেন না বলে আদেশ জারি করেছিল। যদিও এসবের কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কোচিং বন্ধ হবে না। তবে কোচিংকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। কোচিংয়ের অনৈতিক দিকগুলো বন্ধ করা দরকার। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ায় শিক্ষক কাকে, কোথায় পড়াতে পারবেন, সেই বিষয়গুলো বলা হয়েছে।

আজ রোববার সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী কোচিং-প্রাইভেট নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে ১৫ জুন থেকে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত কোচিং বন্ধ রাখার ঘোষণাও দেন তিনি।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান, প্রতিবার পরীক্ষার সময় বলা হয় প্রাইভেট-কোচিং বন্ধ থাকবে কিছুদিনের জন্য। তার মানে এটি ক্ষতিকর। আবার আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে, সেখানে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের (ধারাবাহিক মূল্যায়ন) কাজটি বর্তাবে শিক্ষকদের ওপর। এ অবস্থায় স্থায়ীভাবে কোচিং-প্রাইভেট বন্ধের কোনো উদ্যোগ বা প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে কি না?

আরও পড়ুন

এই প্রশ্নের জবাবে কোচিংয়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, কোচিং ক্ষতিকর, সেটি তাঁরা কখনো বলছেন না। কারণ, সব শিক্ষার্থীর মেধা নিশ্চয়ই এক রকম নয়। আবার এখনো দেশে শ্রেণিকক্ষের আকারটিও (শিক্ষক–শিক্ষার্থীর অনুপাত) কাঙ্ক্ষিত যা হওয়া উচিত, তার চেয়ে অনেকাংশেই বড়। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীর যার যতটা প্রয়োজন ততটা মনোযোগ দিতে পারছেন না। এটা একধরনের সীমাবদ্ধতা। কাজেই অনেক শিক্ষার্থী থাকে, যাদের ক্লাসের পরও হয়তো আরেকটু সহযোগিতার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে কোচিংয়ের কোথাও কোথাও দরকার অবশ্যই থাকতে পারে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, একটা অনৈতিক অংশ আছে। সেটা হলো কোনো কোনো শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সঠিকভাবে না করে কিংবা করলেও শিক্ষার্থীকে বাধ্য করেন তাঁর নিজের কোচিংয়ে আসতে। না এলে অনেক সময় শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব পড়ে। অনৈতিক এই জায়গাটি, যেটাকে কোচিং–বাণিজ্য বলা হয়। কোচিং কথাটা খারাপ নয়, বাণিজ্য কথাটাও খারাপ নয়। দুটোই দরকার আছে। এ দুটো মিলিয়ে যে চিন্তা, সেটা হলো অনৈতিক অংশটুকু খারাপ।

আমাদের কোচিংয়ের বিষয়কে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে, আবার কোচিং বন্ধও করা যাবে না। কিন্তু কোচিংয়ের অনৈতিক দিকগুলো বন্ধ করা দরকার।
দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী

আরেকজন সাংবাদিক জানতে চান—শিক্ষকদের কোচিং স্থায়ীভাবে বন্ধ করবেন কি না? এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক যদি নিজের ছাত্রদের বাধ্য করেন তাঁর কোচিংয়ে আসতে এবং না এলে সমস্যা হয়, সেখানেই সমস্যা। কাজেই নতুন শিক্ষা আইনের খসড়ায় শিক্ষক কাকে পড়াতে পারবেন, কোথায় পড়াতে পারবেন, সেই বিষয়গুলো বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোচিংয়ের বিষয়কে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে, আবার কোচিং বন্ধও করা যাবে না। কিন্তু কোচিংয়ের অনৈতিক দিকগুলো বন্ধ করা দরকার।’

দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে যে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে, সেটি অ্যাপভিত্তিক হবে। সেখানে প্রতিদিনই তার নম্বর দিতে হবে। নিয়মিত অ্যাপের মাধ্যমে হলে পরিবীক্ষণ করার সুযোগ থাকবে। নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিংয়ের সুযোগও কমে আসবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।

আরও পড়ুন

পরীক্ষার সময় সাময়িকভাবে কোচিং সেন্টার বন্ধের কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে কোচিং সেন্টারে কেউ কেউ কখনো প্রশ্নফাঁস বা এই চক্রগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে যে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটি তার একটি অংশ। সে কারণেই কোচিং বন্ধ রাখা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। খসড়াটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনার জন্য ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হতে পারে।