ক্যাম্পাসের ভেতরে অ্যাডভেঞ্চার!

দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় চালন্দা গিরিপথে। ছবি: মাইনুল ইসলাম
দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় চালন্দা গিরিপথে। ছবি: মাইনুল ইসলাম

এখানে প্রকৃতি তার রূপের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় আছে শিক্ষার্থীদের জন্য। শাটল ট্রেনে চড়ে শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে তবেই দেখা মিলবে সেই সৌন্দর্যের। বলছি সুবিশাল জায়গাজুড়ে অবস্থিত সবুজ পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।
ক্যাম্পাসটা যেসব শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ঘরের’ মতো, কত যে গল্প জমা আছে তাঁদের ঝুলিতে! শিক্ষার্থীদের আড্ডায় বাইরের কেউ বসলে সব কথা হয়তো বুঝবেনও না। কিছু বুলি, কিছু নাম—মনে হবে সাংকেতিক ভাষার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই যে চালন্দা গিরিপথের মতো বেরানোর একটা চমৎকার জায়গা আছে, সেটা স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়া আর কেই-বা জানেন! অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই দলবেঁধে এই গিরিপথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইনুল ইসলাম দাবি করলেন, তাঁরাই সর্বপ্রথম গিরিপথটির খবর সবাইকে জানিয়েছিলেন। বলছিলেন, ‘বন্ধুরা মিলে ২০১১ সালে চালন্দা গিরিপথে গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে গেলাম আবার। আমাদের অভিযানের ছবিগুলো ফেসবুকে তুলে ধরার পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এই নয়নাভিরাম চালন্দা গিরিপথ সম্পর্কে সবাই জানতে পারে।’
কলা ঝুপড়ির পাশে রয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ঝরনা। ঝরনার পানির উৎপত্তিস্থলের দিকটি ‘ছড়ার পানি’ নামে পরিচিত। ছড়ার পানি দিয়ে পশ্চিমে প্রায় ৫০ মিনিট হাঁটার পর দক্ষিণে দেখা মিলবে অদ্ভুত সুন্দর চালন্দা গিরিপথের। যাত্রাপথে দেখা হবে পাহাড় থেকে কাঠ কেটে আনা কাঠুরিয়ার সঙ্গে। কখনো-বা দেখা মিলবে সমতল এলাকায় চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষকের। যদি কখনো সাপের সঙ্গেও দেখা হয়ে যায়, শিক্ষার্থীরা তাতে ঘাবড়ে যান না! নিজেকে ‘নাগরাজ’ ভেবে নির্বিঘ্নে গিরিপথের উদ্দেশে পা বাড়ান! আসল কথা হলো শিক্ষার্থীরা জানেন, এই সাপগুলো বিষাক্ত নয়। ছড়ার পানি দিয়ে হাঁটার সময় চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর স্বচ্ছ পানির স্রোতোধারা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় অভিযাত্রীদের।
গিরিপথের প্রবেশমুখে শীতল পানির প্রথম স্পর্শ অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। চারদিকে সুনসান নীরবতা, পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া গিরিপথ দেখতে জটিল কোনো রহস্যের মতো লাগে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ‘চালন্দা গিরিপথ ধরে যাওয়ার সময় নিজেদের বিয়ার গ্রিলস মনে হয়!’ গিরিপথে আলো-ছায়ার খেলা দেখে যে কেউ বিমোহিত হবেন। হাঁটতে হাঁটতে গলা শুকিয়ে গেলে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা সুপেয় পানি তো আছেই।
শিক্ষার্থীদের একেকটা দল গিরিপথে যায় আর ফেসবুকের হোমপেজ ভরে যায় তাঁদের অভিযানের ছবিতে। দেখে উৎসাহিত হন অন্যরাও। বলেন, ‘বন্ধু চলো, চালন্দা গিরিপথ ঘুরে আসি।’ ক্যাম্পাসের ভেতরেই এমন অভিযানের সুযোগ আর কোথায়ই বা আছে!