জীববিজ্ঞান ১ম পত্র

অধ্যায়-৪ 

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-৪ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

আলেয়া বেগম বস্তিতে বাস করেন। সেখানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশার খুব উপদ্রব। কিছুদিন ধরে তাঁর পালা দিয়ে কাঁপুনিসহ জ্বর আসছে। সেই সঙ্গে রয়েছে তলপেটে ব্যথা ও পানির তীব্র পিপাসা। এ অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানালেন, তিনি একধরনের পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রশ্ন:

ক. সুপ্তাবস্থা কাকে বলে?

খ. ভেক্টর বলতে কী বোঝায়?

গ. উক্ত পরজীবী আলেয়া বেগমের যকৃতে কীভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, বর্ণনা করো।

ঘ. আলেয়া বেগমের রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীর জীবনচক্রে কি সুস্পষ্ট জনুক্রম বিদ্যমান? মতামত দাও।

উত্তর: . মানবদেহে পরজীবী প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে রোগের সুপ্তাবস্থা বলে।

উত্তর: . যে প্রাণী সক্রিয়ভাবে রোগ উৎপাদনকারী কোনো পরজীবীকে এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে সংক্রমিত করে এবং সংক্রামকের দেহে যদি পরজীবীর জীবনচক্রের কোনো অংশ সংঘটিত হয়, তখন ওই সংক্রামক প্রাণীকে ভেক্টর বলে। যেমন এনোফিলিস মশকি ম্যালেরিয়া পরজীবীর ভেক্টর। বাংলাদেশে এনোফিলিস গণভুক্ত সাতটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার পরজীবীর ভেক্টর হিসেবে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়।

উত্তর: . আলেয়া বেগম ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত। তাঁর দেহে রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীটি Plasmodium vivax। আলেয়া বেগমের যকৃৎ কোষে সংঘটিত ম্যালেরিয়ার পরজীবীর অযৌন প্রজননকে হেপাটিক সাইজোগনি বলে। এটি নিচের দুটি পর্যায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:

১. প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি

২. এক্সো-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি

১. প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি: অ্যানোফিলিস মশকির লালাগ্রন্থিতে Plasmodium-এর স্পোরোজয়েট দশাটি পরিণত অবস্থায় সঞ্চিত থাকে। এ-জাতীয় মশকির দংশনের ফলে স্পোরোজয়েটগুলো লালারসের সঙ্গে আলেয়া বেগমের দেহে প্রবেশ করে এবং রক্তস্রোতের মাধ্যমে বাহিত হয়ে কেমোট্যাক্সিসের কারণে যকৃতে এসে আশ্রয় নেয়। এতে নিচে বর্ণিত ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে দেখা যায়:

i) স্পোরোজয়েট: এগুলো সঞ্চালনক্ষম, অতি ক্ষুদ্র, সামান্য বাঁকানো, উভয় প্রান্ত সুচালো, দেহবিশিষ্ট। এদের দেহ স্থিতিস্থাপক পর্দায় আবৃত। ৪৫ মিনিট পর স্পোরোজয়েটগুলো রক্তরস থেকে যকৃতের প্যারেনকাইমা কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, এখানেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

ii) ক্রিপ্টোজয়েট: যকৃৎ কোষ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে স্পোরোজয়েটগুলো গোলাকার ধারণ করে। তখন এগুলোকে ক্রিপ্টোজয়েট বলে।

iii) সাইজন্ট: প্রতিটি ক্রিপ্টোজয়েটের নিউক্লিয়াস ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে কয়েক দিনের মধ্যে অসংখ্য (প্রায় ১২০০) ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস গঠন করে। পরজীবীর বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত এ অবস্থাকে সাইজন্ট বলে।

iv) ক্রিপ্টোমেরোজয়েট: সাইজন্টের প্রতিটি নিউক্লিয়াসকে ঘিরে সাইটোপ্লাজম জমা হয় এবং নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে ক্রিপ্টোমেরোজয়েট বলে।

২. এক্সো-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি: প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনিতে উৎপন্ন মেরোজয়েটগুলো নতুন যকৃৎ কোষকে আক্রমণ করে এবং এক্সো-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনির সূচনা করে। এতে নিচে বর্ণিত ধাপগুলো দেখা যায়:

i) সাইজন্ট: পরিণত ক্রিপ্টোমেরোজয়েটের নিউক্লিয়াস বারবার বিভাজিত হয়ে বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস গঠন করে। ম্যালেরিয়া পরজীবীর বহু নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট এ অবস্থাকে সাইজন্ট বলে।

ii) মেটা-ক্রিপ্টোমেরোজয়েট: সাইজন্টের প্রতিটি নিউক্লিয়াসের চারপাশে সাইটোপ্লাজম জমা হয়ে যেসব নতুন কোষ সৃষ্টি করে, সেগুলোকে মেটা-ক্রিপ্টোমেরোজয়েট বলে। আকারের ভিত্তিতে এদের দুভাগে ভাগ করা যায়: অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র মাইক্রোমেটা-ক্রিপ্টোমেরোজয়েট এবং বড় ম্যাক্রো মেটা-ক্রিপ্টোমেরোজয়েট। ক্ষুদ্রগুলো যকৃৎ কোষকে আক্রমণ না করে রক্তস্রোতে চলে আসে এবং মানুষের লোহিত কণিকায় প্রবেশ করে। কিন্তু বড় মেরোজয়েটগুলো যকৃতে থেকে যায় এবং সেখানেই সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায়।

উত্তর: . আলেয়া বেগমের রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীটি Plasmodium vivax। ম্যালেরিয়া পরজীবী অযৌন ও যৌন উভয় পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। এর জীবচক্রে হ্যাপ্লয়েড (n) ও ডিপ্লয়েড (2n) দুটি পর্যায় আছে। কোনো জীবের জীবনচক্রে অযৌন ও যৌন জনুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলে। আগে ধারণা ছিল ম্যালেরিয়ার পরজীবীর জননকোষ সৃষ্টির সময় মায়োসিস বিভাজন ঘটে। তাই এর নাম ছিল গ্যামিটোজেনিক অধ্যায়। পরবর্তী গবেষকদের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, মায়োসিস বিভাজন ঘটে জাইগোট সৃষ্টি হওয়ার পর ঊত্তসিস্ট পর্যায়ে। অর্থাৎ ম্যালেরিয়ার পরজীবীতে মায়োসিস জাইগোজেনিক ধরনের। রেখাচিত্রের সাহায্যে নিচে ম্যালেরিয়ার পরজীবীর জীবনচক্র দেখানো হলো:

ম্যালেরিয়ার পরজীবীতে ডিপ্লেয়েড পর্যায় খুব সংক্ষিপ্ত। এটি মাইক্রো ও ম্যাক্রোগ্যামিটের একীভবনে সৃষ্ট জাইগোট থেকে উওসিস্টে রূপান্তর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। উওসিস্ট পরিণত হলে প্রথম বিভক্তি ঘটে মায়োসিস প্রক্রিয়ায়। ফলে হ্যাপ্লয়েড দশার আবির্ভাব ঘটে। এর পরের বিভক্তিগুলো মাইটোসিস ধরনের। বারবার মাইটোসিস বিভাজনের ফলে স্পোরোজয়েট সৃষ্টি হয় হ্যাপ্লয়েড পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে। স্পোরোজয়েট দশা থেকে গ্যামিট সৃষ্টি পর্যন্ত পর্বটি হ্যাপ্লয়েড বংশ (n) নির্দেশ করে। এভাবে ম্যালেরিয়ার পরজীবীর জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড দশা পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। অর্থাৎ আলেয়া বেগমের রোগ সৃষ্টিকারী ম্যালেরিয়ার পরজীবীর জীবনচক্রে সুস্পষ্ট জনুক্রম বিদ্যমান।

মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান, প্রভাষক

রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা