ঢাকার সেরা কলেজগুলোতে বাঁধভাঙা আনন্দ
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যেই নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাস করছিলেন শিক্ষার্থীরা। ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কলেজ প্রাঙ্গণ রূপ নেয় আনন্দমেলায়। আগে থেকেই জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের জটলা থেকে ক্ষণে ক্ষণে ‘রাজউক, রাজউক’ চিৎকার ভেসে আসছিল। ব্যান্ড বাজিয়ে, গান গেয়ে, কেক মাখিয়ে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন তাঁরা। একপর্যায়ে অভিভাবকেরাও যোগ দিচ্ছিলেন সন্তানদের ভালো ফলের আনন্দ-উল্লাসে।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের চিত্রটি গতকাল বুধবার দুপুরে এমনই ছিল। চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রতিষ্ঠানটি এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ডে সেরাদের সেরা হয়েছে।
শুধু রাজউক কলেজ নয়, ভালো ফলের আনন্দে ভেসেছেন আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে এবারে সেরা ২০টি কলেজের তালিকায় রাজধানীর নামকরা কিছু কলেজ স্থান ধরে রাখতে পারেনি, পিছিয়ে গেছে। আবার নতুন কিছু প্রতিষ্ঠান সেরার তালিকায় চলে এসেছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মান বাড়ছে। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভালো করে আসা কলেজগুলোকে তুলনামূলক অপরিচিত ও নতুন কলেজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। ভালো কলেজের তালিকায় পেছনে চলে যাওয়া কলেজগুলো এখন পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হবে।
তবে ফলাফলের দিক থেকে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ চার বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রথম স্থানেই আছে। এবার এই কলেজ থেকে এক হাজার ২৬১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক হাজার ২০১ জন। পাসের হার শতভাগ।
কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমামুল হুদা বলেন, ‘প্রথম হতে হবে, এ লক্ষ্যে পড়াই না। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখায় ভীতি নেই।’
জিপিএ-৫ পাওয়া মাইশা মালিহার মা হাফিজা কবির বললেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আমরা কিছুই করতে পারলাম না।’
রাজউক কলেজের ধারাবাহিক ভালো ফলের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত চিৎকার ‘ডিসিপ্লিন, ডিসিপ্লিন, ডিসিপ্লিন’।
ঢাকা বোর্ডে এবার দুই ধাপ পিছিয়ে পঞ্চম হয়েছে মেয়েদের জন্য অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ বছর এই কলেজ থেকে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক হাজার ৬২ জন। দুই ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, অবস্থান সব সময় একই জায়গায় থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। অনেক নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওপরে আসছে, তাদের স্বাগত জানাই।
এবার ঈর্ষণীয় ফল করেছে খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ। গত বছর কলেজটি ১১তম অবস্থানে ছিল। এবার সাত ধাপ এগিয়ে চতুর্থ স্থান দখলে করেছে তারা। সেখানেও ছিল যথারীতি আনন্দ-উল্লাস। প্রতিষ্ঠানটির ৫৮৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০৮ জনই পেয়েছেন জিপিএ-৫। কলেজটির অধ্যক্ষ মো. মাকছুদ উদ্দিন বলেন, প্রতিযোগিতা করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেই শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করা যায়। তাই শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫-এর চেয়ে জ্ঞানচর্চার দিকে বেশি সচেতন হতে হবে।
ঢাকার বাইরে নরসিংদীর আবদুল কাদের মোল্লা সিটি কলেজ এবারও দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখে আরও দৃষ্টি কেড়েছে।
ঢাকা বোর্ডে সেরা দশে স্থান পাওয়া অন্য কলেজগুলো হলো: আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ (তৃতীয়), নটর ডেম কলেজ ও ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ষষ্ঠ), উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ (সপ্তম), ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কিংস কলেজ, গুলশান কলেজ (নবম) এবং ক্যামব্রিয়ান কলেজ (দশম)।
ঢাকার ভালো কলেজগুলোতে ফল এসে পৌঁছার পর ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ক্যাম্পাসে আনন্দে মেতে ওঠেন। হাত ধরে একসঙ্গে নেচে-গেয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে কোথাও কোথাও অভিভাবক ও কলেজের শিক্ষকদের অংশ নিতেও দেখা গেছে।
সেরা তালিকায় নাম না থাকলেও ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজের পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২৮ শিক্ষার্থী। ঢাকার এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজে পাসের হার শতভাগ, বিজ্ঞানে ১১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০৪ জন।