
অধ্যায়-১
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধ্যায়-১ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
প্রশ্ন: বিশ্বগ্রাম কী? বিশ্বগ্রাম ধারণার জনক কে? বর্তমান পৃথিবীতে বিশ্বগ্রামের বাস্তবতা আলোচনা করো।
উত্তর: বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সর্বপ্রথম তুলে ধরেন বিশষ্টি কানাডিয়ান দার্শনিক Herbert Marshall McLuhan (July ২১, ১৯১১; December ৩১, ১৯৮০)। তিনি ১৯৬২ সালে তঁার The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man (১৯৬২) নামক বইয়ে প্রথম বিশ্বগ্রামের ধারণা দেন।
Marshall McLuhan-এর মতে বিশ্বগ্রাম বলতে এমন একটি ধারণাকে বোঝানো হয়, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রানে্তর লোকজন পরস্পরের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ, কথোপকথন, গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং ক্রমেই একটি একক কমিউনিটিতে পরিণত হয়। এককথায়, বৈদু্যতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ দ্বারা বিশ্ব একটি গ্রাম বা ভিলেজের রূপ লাভ করেছে।
দুনিয়াজুড়ে স্বল্পসময়ে তথ্যপ্রযুক্তিগত যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধা বিশ্বকে একটি ছোট গ্রাম হিসেবে আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। বিশ্বগ্রাম বলতে মূলত উন্নত বিশ্ব এবং প্রযুক্তিতে অগ্রসর কিছু উন্নয়নশীল দেশকে বোঝায়। এসব দেশ ছাড়াও অনেক অনুন্নত দেশ রয়েছে যাদের কাছে এখনো প্রযুক্তির সুবিধা এখনো পর্যাপ্তভাবে পঁেৌছায়নি। উন্নত ও প্রযুক্তিবাদী দেশগুলোর মুনাফা অর্জনের অন্যতম উপায় তথ্যপ্রযুক্তিগুলো খুব দ্রুত অনুন্নত দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া। অনেক উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে যাদের অনেক নাগরিক ও অনেক অঞ্চল তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তা সত্ত্বেও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুনিয়াজুড়ে এক অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শহর ও গ্রামের ভেদরেখা বিলুপ্ত করে সবকিছু একাকার করে দিয়ে একদিন নির্মিত হবে সেই বিশ্বগ্রাম! সেখানে শোষণ ও বৈষম্য অনেকাংশে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, দারিদর্্য-বিমোচন হবে, অশিক্ষার অন্ধকার দূরীভূত হবে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ ও জাতিসত্তাগত সব ধরনের বিভেদ মুছে যাবে। ফলে আশা করা যায় যে বর্তমান শতাব্দীতে প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগের যে গণজোয়ার চলছে, এই জোয়ারের স্রোতে সারা পৃথিবীর প্রতিটি প্রানে্তর প্রত্যেক মানুষই অন্তভর্ুক্ত হবে এবং আমাদের এই বিশ্বগ্রাম কথাটি বাস্তবে পরিণত হবে।
বিশ্বগ্রামের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তবে আয়তনে ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে যে অবস্থান সৃষ্টি করে নিয়েছে, তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট এই দেশটি মাত্র ১৯৯৬ সালে যোগাযোগপ্রযুক্তির মহাসড়ক ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিগত দুই দশকে অনেক উন্নতি করেছে। যোগাযোগপ্রযুক্তির সবচেয়ে উন্নত মাধ্যম সাবমেরিন কেব&ল নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে ২০০৪ সালে। যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী নয়, তার পরও বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে গণ্য করতে বাধ্য করছে। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতির দিক হলো মোবাইল কমিউনিকেশন। এই খাতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশ। এ দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এবং ৯৫ শতাংশ এলাকা বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মুদ্রণ ও সম্প্রচার মাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইন মিডিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেটের আওতায় আছে ২০ শতাংশের বেশি পরিবার। তবে এ হার মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও উলে্লখ করা হয়, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়ছে (প্রথম আলো, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২)।
তবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সহজলভ্য ও দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যমে হচ্ছে ইন্টারনেট। এই খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ততটা দৃঢ় না হলেও এই খাতে খুব শিগগির বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বগ্রামের অন্যতম অংশীদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবে। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষিত ও প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ ও যুবশক্তি।
প্রভাষক, চট্টগ্রাম প্রকেৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ