প্রাথমিক বিজ্ঞান

.
.

আবহাওয়া ও জলবায়ু
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বিজ্ঞানের অধ্যায়-১১ ‘আবহাওয়া ও জলবায়ু’ থেকে প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:
প্রশ্ন: আবহাওয়া পরিবর্তনের নিয়ামকগুলো কী কী।
উত্তর:আবহাওয়া পরিবর্তনের নিয়ামকগুলো হলো তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, বায়ুর আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম লেখো।
উত্তর:বাংলাদেশের তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো—কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়, টনের্ডো।
প্রশ্ন: নিম্নচাপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর:কোনো জায়গায় তাপমাত্রা বেশি হলে সেখানকার বায়ু উত্তপ্ত হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে বায়ু হালকা বা ফাঁকা হয়ে যায়। অর্থাত্ বায়ুচাপ কমে যায়। এ রকম অবস্থায় নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: বায়ুর আর্দ্রতা দিয়ে কী বোঝানো হয়?
উত্তর:তাপের কারণে বায়ুতে জলীয় বাষ্প বিরাজ করে। এ জলীয় বাষ্প আবহাওয়ার একটি নিয়ামক। বায়ুতে জলীয় বাষ্প কী পরিমাণে আছে তা মাপা যায়। একে বায়ুর আর্দ্রতা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাত্ বায়ুর আর্দ্রতা বলতে বায়ুতে কী পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে তা বোঝানো হয়।
প্রশ্ন: আবহাওয়া কাকে বলে?
উত্তর: কোনো স্থানের বায়ুর তাপমাত্রা, চাপ, আর্দ্রতা এবং বায়ুপ্রবাহের অল্প সময়ের বা কয়েকদিনের অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।
প্রশ্ন: জলবায়ু কাকে বলে?
উত্তর: সাধারণত কোনো অঞ্চলের ২৫ থেকে ৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে।

# রচনামূলক/কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন:
প্রশ্ন: কোনো দিন ভাপসা গরম পড়লে বা গরমে ঘাম হলে দেখা যায় সেদিন বৃষ্টি হয়। কেন তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাধারণত বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ভাপসা গরম পড়ে এবং বেশি বেশি ঘাম হয়। এ সময় বায়ুচাপ কম থাকে।
যদি বাংলাদেশের কোনো এলাকায় ভাপসা গরম পড়ে এবং ঘাম হয় তাহলে বুঝতে হবে সে এলাকায় নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিম্নচাপ এলাকায় অন্য কোনো উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্প মিশ্রিত বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। একসময় এই বায়ুর জলীয়বাষ্প ঠান্ডায় ঘনীভূত হয় এবং মেঘ বা পানিকণায় পরিণত হয়ে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে। এ জন্য যেদিন ভাপসা গরম পড়ে ঘাম হয় সেদিন বৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: সূর্যতাপ কীভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোনো স্থানের তাপমাত্রার তীব্রতা নির্ভর করে স্থানটি কতটা সূর্যতাপ পায় এবং সূর্যকিরণ কীভাবে পড়ে তার ওপর। পৃথিবীর উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দূরত্বে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে যে বৃত্তাকার রেখা কল্পনা করা হয়, তাকে বিষুবরেখা বলে। বিষুবরেখা অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারা বছর প্রায় লম্বভাবে পড়ে। তাই ওই সব অঞ্চল সূর্যতাপ বেশি পায়। সে জন্য ওই সব অঞ্চলের আবহাওয়া সর্বাপেক্ষা উষ্ণ থাকে। বিষুবরেখা থেকে যতই উত্তরে বা দক্ষিণে যাওয়া যায়, সূর্যরশ্মি ততই তির্যকভাবে পড়ে। দিন-রাত্রির পার্থক্য বৃদ্ধি পায়। ফলে মেরু অঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে থাকে এবং আবহাওয়া ঠান্ডা হয়। এ কারণে মেরু অঞ্চল প্রায় সব সময় বরফে ঢাকা থাকে। অতএব বলা যায়, আবহাওয়া পরিবর্তনে সূর্যের তাপের ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টি কম হয় কেন?
উত্তর: বাংলাদেশে শীতকালে বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে এর বিপরীত। শীতকালে সূর্য বাংলাদেশের দক্ষিণে খাড়াভাবে কিরণ দেয়, তাই সেখানে বায়ুচাপ কম থাকে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের উত্তরে বেশ শীত এবং বায়ুচাপ বেশি থাকে। তাই শীতকালে বাংলাদেশের উত্তর দিক থেকে বায়ু দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে জলীয় বাষ্প কম থাকে। এ জন্য বাংলাদেশে শীতকালে বায়ু শুষ্ক থাকে এবং বৃষ্টি কম হয়।
প্রশ্ন: বর্ষকালে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর:বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তাই বাংলাদেশে তখন বেশ গরম এবং বায়ুচাপ কম থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে তখন কম গরম, বায়ুচাপ বেশি। তাই তখন বায়ু বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ দিক থেকে এ বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। এ জলীয় বাষ্প প্রচুর ঠান্ডা হয়ে পানি কণায় পরিণত হয়। ফলে এ সময় বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
প্রশ্ন: কালবৈশাখী ঝড় কেন হয়। তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বৈশাখ মাসে অর্থাত্ গ্রীষ্মকালে সাধারণত সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ অঞ্চলে বায়ু সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। এভাবে বিকেলের দিকে এ অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে ও হিমালয়ের দিকে বায়ুর চাপ থাকে বেশি। তাই উচ্চচাপের উত্তরাঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়। এ জন্যই কালবৈশাখী ঝড় হয়।
প্রধান শিক্ষক, ফকিরেরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা।