এসএসসি পরীক্ষা–২০২১: সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসারে
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা | সৃজনশীল প্রশ্ন
অধ্যায় ২
‘কিশোর আলো’ একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন। সেখানে বালক রাজা তুতেন খামেনের মৃতদেহ ও সমাধি আবিষ্কারের ঘটনা নিয়ে একটি চমকপ্রদ ফিচার প্রকাশিত হয়, যা পড়ে বিপুল রীতিমতো অবাক হয়। সে ভাবে, প্রাচীনকালে কীভাবে এই সভ্যতার লোকেরা এত উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিল।
প্রশ্ন
ক. রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিকদের অবদান ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন সভ্যতার কথা বলা হয়েছে? উক্ত সভ্যতার পটভূমি আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টিই উক্ত সভ্যতার একমাত্র আবিষ্কার নয়; তারা লিপি বা অক্ষর এবং কাগজেরও আবিষ্কারক—মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
উত্তর
ক. রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা ল্যাটিন রাজা রোমিউলাস।
খ. খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রীকদের যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। তখন শিশুদের খেলাধূলার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হতো। বিদ্যালয়ে তাদের খেলাধুলার হাতেখড়ি হতো। উৎসবের দিনে গ্রিসে নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল দেবতা জিউসের সম্মানে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতা।
অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গ্রিসের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদরা অংশ নিতেন। এতে দৌড়ঝাঁপ, মল্লযুদ্ধ, চাকা নিক্ষেপ, বর্ষা ছোড়া, মুষ্টিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকত। প্রতি চার বছর পরপর এই খেলা অনুষ্ঠিত হতো। তাই বলা যায়, খেলাধুলার ক্ষেত্রে গ্রিকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
গ. উদ্দীপকে মিশরীয় সভ্যতার কথা বলা হয়েছে।
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর–পূর্ব অংশে মিশরের অবস্থান। নীল নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা সভ্যতাটি মিশরীয় সভ্যতা নামে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ থেকে প্রথম রাজবংশের শাসন আমলে মিশরে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়। এ সময় মেনেসের নেতৃত্বে এ সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়, যা প্রায় ২৫০০ বছরের বেশি সময়ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। ফারাওদের অধীনে মিশর প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে একের পর সাফল্য লাভ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে তাদের পিরামিড ও মমি। মৃতদেহকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা মমি করে রাখত এবং এ মমিগুলো রক্ষার জন্য তারা পিরামিড তৈরি করেছিল। যেমনটি উদ্দীপকে বলা হয়েছে।
উদ্দীপকের বিপুল ‘কিশোর আলো’ ম্যাগাজিনে রাজা তুতেন খামেনের মৃতদেহ ও সমাধি আবিষ্কারের ঘটনা পড়ে অবাক হয়, যা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মমির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ওপরের আলোচনা হতে স্পষ্ট যে উদ্দীপকে প্রাচীন সভ্যতার কথাই বলা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে মিশরীয়দের মমি করার পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে। মমি করার পদ্ধতি উক্ত সভ্যতার একমাত্র আবিষ্কার নয়; তারা লিপি বা অক্ষর এবং কাগজেরও আবিষ্কারক—মন্তব্যটি যথার্থ।
মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। মিশরীয় লিখনপদ্ধতির উদ্ভব নগর সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে। প্রথম দিকে মিশরীয়রা ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করত, যার নাম ছিল চিত্রলিপি। প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে সর্বপ্রথম মিশরীয়রাই ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করে। মিশরীয় চিত্রলিপিকে বলা হতো হায়ারোগ্লিফিক বা পবিত্র অক্ষর, যা ব্যবহার হতো ধর্মীয় বাণী এবং রাজার আদেশ প্রচারের জন্য। মিশরীয়রা লিখনপদ্ধতি আবিষ্কারের পাশাপাশি নলখাগড়া জাতীয় গাছের কাণ্ড থেকে কাগজ বানাতে শেখে। এ কাগজের ওপর তারা লিখত। গ্রিকরা এই কাগজের নাম দেয় প্যাপিরাস, যা থেকে ইংরেজি পেপার শব্দের উৎপত্তি।
ওপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, বিশ্ব সভ্যতায় মিশরীয়দের নানান আবিষ্কারে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
মিজান চৌধুরী, শিক্ষক
লালমাটিয়া উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা