বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

.
.

অধ্যায়-৪
প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের অধ্যায়-৪ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
প্রশ্ন:
ক. উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন কবে?
খ. অপসূর কী? বুঝিয়ে লেখো।
গ. x চিহ্নিত রেখাগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পৃথিবীর সময় নির্ণয় করতে y রেখার ভূমিকা অনস্বীকার্য।’ উক্তিটির যৌক্তিকতা প্রমাণ করো।
উত্তর-ক: ২১ জুন উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন।

উত্তর-খ: জুলাই মাসের ১ থেকে ৪ তারিখ সূর্য পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে। একে পৃথিবীর অপসূর বলে।
সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবী সব সময় ৬৬হ্ন৩০র্ কোণে হেলে আবর্তন করে। ফলে বিভিন্ন স্থানে সূর্যরশ্মি পতনে কৌণিক তারতম্য ঘটে। পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার বলে পরিক্রমণকালে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। কখনো সূর্য পৃথিবীর নিকটতম স্থানে থাকে আবার কখনো পৃথিবী থেকে দূরে অবস্থান করে। এই দূরে অবস্থান করাকেই পৃথিবীর অপসূর বলে।
উত্তর-গ: x চিহ্নিত রেখাগুলো হলো সমাক্ষরেখা। সমাক্ষরেখার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, রেখাগুলো পরস্পর সমান্তরাল কিন্তু সমান নয়।
গোলাকার পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণে সমান দূরত্ব বজায় রেখে পূর্ব-পশ্চিমে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে। একে বলে নিরক্ষরেখা। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে অনেকগুলো রেখা কল্পনা করা হয়েছে, এগুলোকে বলে সমাক্ষরেখা।
সমাক্ষরেখাগুলো পৃথিবীকে পূর্ণবৃত্তে আবর্তন করে। নিরক্ষরেখার সঙ্গে এসব রেখা পৃথিবীর কেন্দ্রে একটি কৌণিক অবস্থা সৃষ্টি করে, একে বলে অক্ষাংশ। সমাক্ষরেখাগুলো অক্ষাংশের পরিচয়ও বহন করে। যেমন ০হ্ন তে নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা, ২৩হ্ন৩০র্ উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে কর্কট ও মকরক্রান্তিরেখা ইত্যাদি।
সমাক্ষরেখার সর্বোচ্চ কৌণিক দূরত্ব হবে ৯০হ্ন, যা মেরুবৃত্ত নামে পরিচিত হয়।
প্রদর্শিত চিত্রের x রেখাগুলো পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থিত এবং পৃথিবীকে পূর্ণবৃত্তে আবর্তন করে রেখেছে। একটি রেখা থেকে আরেকটি রেখা ও সমান দূরে অবস্থিত। ফলে রেখাগুলো সমান্তরাল। আবার নিরক্ষরেখা থেকে অক্ষাংশ বেড়ে উত্তর-দক্ষিণে যতই অগ্রসর হয়, রেখাগুলোর পরিধিও তত কমতে থাকে। ফলে সমাক্ষরেখা পরস্পর সমান হয় না।
উত্তর-ঘ: পৃথিবীপৃষ্ঠের সময় গণনার জন্য y রেখা তথা মধ্যরেখাগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। উক্তিটি যথার্থ।
উত্তর-দক্ষিণে পৃথিবীর উপরিভাগে যে রেখাগুলো কল্পনা করা হয়েছে, সেগুলোকে বলে মধ্যরেখা। মধ্যরেখাগুলোর একটিকে প্রধান ধরা হয়, যা গ্রিনিচ মানমন্দিরের ওপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে। একে বলে মূল মধ্যরেখা। মূল মধ্যরেখার ঠিক বিপরীত দিকে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হিসেবে পরিচিত।
মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে অনেকগুলো রেখা পৃথিবীকে অর্ধবৃত্তের ন্যায় আবর্তন করে আছে। এগুলোকে বলে দ্রাঘিমারেখা। দ্রাঘিমারেখাগুলো দ্রাঘিমাংশের পরিচয় বহন করে। যেহেতু পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে, সেহেতু গোলাকার পৃথিবীর সর্বত্র এক সময়ে আলোকিত হয় না আবার অন্ধকারও থাকে না।
পৃথিবীর আলোকিত অংশে দিন ও অন্ধকার অংশে রাত বিরাজ করে। ফলে উত্তর-দক্ষিণে অর্ধবৃত্তের ন্যায় রেখাগুলো সময় নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর কেন্দ্রে ৩৬০০ কোণ সৃষ্টি হয় বলে মূল মধ্যরেখাকে ০০ ধরলে পূর্ব ও পশ্চিমে ১৮০০ করে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা কল্পনা করা যায়। মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে সময় নির্ণয় করা হয়। আর আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা থেকে দিন বা তারিখ গণনা শুরু হয়।
চিত্রে প্রদর্শিত y রেখাগুলো মূলত দ্রাঘিমারেখা, এগুলো পরস্পর সমান কিন্তু সমান্তরাল নয়। এগুলো অর্ধবৃত্তের ন্যায় পৃথিবীকে আবর্তন করে রেখেছে। পৃথিবী যেহেতু পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে, তাই সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ রেখাগুলোই ভূমিকা রাখে।
শিক্ষক, মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা