অধ্যায়-৪
প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের অধ্যায়-৪ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# পাশের চিত্রটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. অক্ষরেখা কাকে বলে?
খ. স্থানীয় সময় কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. A ও B চিহ্নিত স্থানের সম্পর্কটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'A' স্থানের দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পূর্ব হলে 'B' স্থানের দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পশ্চিম হবে না। উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
উত্তর-ক.
পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে উত্তর ও দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষরেখা বলে।
উত্তর-খ.
মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থান থেকে কোনো স্থানের সময় নির্ণয় করাকে স্থানীয় সময় বলে। পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ মেরুরেখার ওপর আবর্তিত হচ্ছে। ফলে পূর্ব দিকের স্থানগুলোয় আগে সূর্যোদয় হয়। পৃথিবীর আবর্তনের সময় কোনো স্থানে যখন সূর্য ঠিক মাথার ওপর আসে বা সর্বোচ্চে অবস্থান করে, তখন এ স্থানে মধ্যাহ্ন হয়। এ সময় ঘড়িতে দুপুর ১২টা ধরে অন্যান্য সময় নির্ণয় করার পদ্ধতি হলো স্থানীয় সময়। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যেও স্থানীয় সময় নির্ণয় করা যায়।
উত্তর-গ.
চিত্রে 'A' ও 'B' চিহ্নিত স্থানের সম্পর্ক হলো একটি অপরটির প্রতিপাদ স্থান।
ভূপৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত কোনো বিন্দুর বিপরীত বিন্দুকে সেই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে। পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে একটি কল্পিত রেখা যা পৃথিবীর ঠিক বিপরীত দিকে টানা হয়, তখন ওই কল্পিত রেখার উভয় বিন্দুই একটি অপরটির প্রতিপাদ স্থান। প্রতিপাদ স্থান সম্পূর্ণরূপে একে অন্যের বিপরীত দিকে থাকে। কোনো বিন্দুর অক্ষাংশ যত ডিগ্রি হবে, তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশও তত ডিগ্রি হবে। তবে স্থান দুটি নিরক্ষরেখার দুই পাশে অবস্থান করে বিধায় একটি উত্তর অক্ষাংশ হলে অন্যটি দক্ষিণ অক্ষাংশ হবে। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো স্থানের অক্ষাংশ ১০হ্ন উত্তর অক্ষাংশ হলে, এর প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ হবে ১০হ্ন দক্ষিণ। মূলত স্থান দুটি দুই গোলার্ধে অবস্থান করবে।
চিত্রের প্রদর্শিত 'A' ও 'B' এর অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে উভয় স্থান একটি অপরটির প্রতিপাদ স্থান। 'A' বিন্দু থেকে রেখাটি পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে 'B' স্থানে এসে পৌঁছেছে। তাই উভয় স্থানের সম্পর্ক হলো প্রতিপাদ স্থান।
উত্তর-ঘ.
হ্যাঁ, 'A' স্থানের দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পূর্ব হলে 'B' স্থানের দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পশ্চিম হবে না। উক্তিটি যথার্থ। প্রতিপাদ স্থানের ক্ষেত্রে অক্ষাংশ বিপরীত হলেও দ্রাঘিমাংশ বিপরীত দিকে অবস্থান করলে দ্রাঘিমার পরিমাণ ভিন্ন হয়। দ্রাঘিমা রেখাগুলো যেহেতু উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত, সেহেতু মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে পূর্ব বা পশ্চিমে কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্ব হলো দ্রাঘিমা। গোলাকার পৃথিবী তার কেন্দ্রে ৩৬০হ্ন কোণ উত্পন্ন করে এবং মূল মধ্যরেখাকে ০হ্ন ধরে তার বিপরীত রেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (১৮০হ্ন) ধরা হয়। ফলে মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব দিক দিয়ে ১৮০হ্ন পর্যন্ত পশ্চিম দ্রাঘিমা এবং আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা মূলত ১৮০হ্ন পূর্ব ও পশ্চিম দ্রাঘিমা।
পৃথিবীপৃষ্ঠের বিপরীত দিকে অবস্থিত একটি স্থানের দ্রাঘিমা যদি পূর্ব দিকে হয়, তবে অন্য স্থানটির দ্রাঘিমা পশ্চিম দিকে হবে। এবং উভয় স্থানের মধ্যে দ্রাঘিমার ব্যবধান হবে ১৮০হ্ন। উদ্দীপকের 'A' স্থানটির দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পূর্ব হওয়ার অর্থ হলো তা মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত। তাহলে 'B' স্থানের দ্রাঘিমা হবে মূল মধ্যরেখার পশ্চিমে। যেহেতু উভয় স্থানের মধ্যে দ্রাঘিমার ব্যবধান হবে ১৮০হ্ন, সেহেতু 'B' স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ১৮০হ্ন থেকে ৫০হ্ন বিয়োগ দিয়ে আমরা পাই (১৮০হ্ন - ৫০হ্ন) ১৩০হ্ন। 'B' স্থানের দ্রাঘিমা হবে ১৩০হ্ন পশ্চিম।
প্রদত্ত উদ্দীপকে ৫০হ্ন পূর্ব দ্রাঘিমার প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পশ্চিম না হওয়ার যুক্তিটি যথার্থ। কেননা, অক্ষাংশের ক্ষেত্রে বিপরীত হলেও দ্রাঘিমার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
মো. আবুল হাছান, শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা