অধ্যায়-৪
প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের অধ্যায়-৪ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# চিত্রটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. পৃথিবীর গতি কত প্রকার?
খ. বার্ষিক গতির একটি ফলাফল ব্যাখ্যা করো।
গ. চিত্রে ‘A’ অংশে কোন ধরনের জোয়ার প্রদর্শিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘B’ অংশেও কি একই ধরনের জোয়ার সম্ভব? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর-ক.
পৃথিবীর গতি দুই প্রকার।
উত্তর-খ.
বার্ষিক গতির অন্যতম ফলাফল হলো দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এ কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমের সময় পৃথিবী বিশেষ কৌণিক অবস্থানে থাকার কারণে সূর্য কখনো নিরক্ষরেখায় এবং এর উত্তর ও দক্ষিণে সর্বোচ্চ কর্কট ও মকরক্রান্তি রেখায় লম্বভাবে অবস্থান করে। ফলে সূর্য কর্কটক্রান্তিতে অবস্থানকালে উত্তর গোলার্ধে দিন বড় ও রাত ছোট হয়। আর সূর্য মকরক্রান্তিতে অবস্থানকালে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় ও রাত ছোট হয়। সূর্য যখন নিরক্ষরেখায় অবস্থান করে, তখন উভয় গোলার্ধে দিন-রাত সমান হয়।
উত্তর-গ.
প্রদর্শিত চিত্রে ‘A’ অংশে মুখ্য জোয়ারের কথা বোঝানো হয়েছে। পৃথিবীর জলরাশি চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ এবং নিজের গতির কারণে কখনো কখনো ফুলে ওঠে। পানির এ ফুলে ওঠাকে জোয়ার বলে। এমনইভাবে কোনো কোনো স্থানের জলরাশি নেমে যায়, তখন তাকে ভাটা বলে।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে আর চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে পরিভ্রমণ করছে। সূর্য থেকে চাঁদ পৃথিবীর নিকটবর্তী হওয়ায় পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বেশি। ফলে চাঁদ পৃথিবীর যে পাশে অবস্থান করে, সে পাশের জলরাশি বিশেষভাবে ফুলে ওঠে। এভাবে জলরাশি ফুলে ওঠাকে মুখ্য জোয়ার বলে। চিত্রে প্রদর্শিত ‘A’ অংশটি চাঁদের দিকে থাকায় এ অংশের জলভাগ বেশি ফুলে উঠতে দেখা যায়। ফলে ‘A’ অংশে মুখ্য জোয়ারের কথা বোঝানো হয়েছে। কোনো স্থানে সাধারণত ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরপর মুখ্য জোয়ার হতে দেখা যায়।
উত্তর-ঘ.
‘B’ অংশে গৌণ জোয়ারের চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। ‘B’ অংশেও মুখ্য জোয়ার হওয়া সম্ভব। পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের কারণে যেমন জোয়ার-ভাটা হয়ে থাকে, তেমনি ‘কেন্দ্রাতিগ’ শক্তির কারণেও জোয়ার-ভাটা হয়। পৃথিবী তার অক্ষে বা মেরুদণ্ডে দ্রুতবেগে ঘুরছে বলে তার পৃষ্ঠ থেকে তরল জলরাশি চতুর্দিকে ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আবার পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হয়, তার বিপরীত দিকে পানির নিচের স্থলভাগ পৃথিবীর কেন্দ্রের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ। ফলে তার ওপর চাঁদের আকর্ষণ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের সমান থাকে। এতে বিপরীত দিকের পানিরাশি কিছুটা ফুলে উঠে যে জোয়ারের সৃষ্টি করে, তাকে গৌণ জোয়ার বলে। গৌণ জোয়ারকে পরোক্ষ জোয়ারও বলা হয়।
পৃথিবী ও চাঁদের পারস্পরিক আবর্তনের কারণে কোনো স্থানে জোয়ারের ছয় ঘণ্টা ১৩ মিনিট পর ভাটা শুরু হয়। আবার ভাটার ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পর জোয়ার শুরু হয়। কিন্তু ওই স্থানটি তখন চন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান না করে বিপরীত দিকে অবস্থান করে। ফলে প্রথম জোয়ারটি মুখ্য হলে পরবর্তী (৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট + ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট) ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পর যে জোয়ারটি হয়, তা গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ার হয়ে থাকে। ঠিক তখনই বিপরীত স্থানে মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হয়।
ফলে চিত্রে প্রদর্শিত ‘B’ অঞ্চলটি ‘A’ অঞ্চলের বিপরীত অবস্থান। ‘A’ অঞ্চলে যখন মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হয়, তার ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পর ‘B’ অঞ্চলে মুখ্য জোয়ার সংঘটিত হবে। তাই পৃথিবীর কোনো স্থানে মুখ্য জোয়ার হলে তার বিপরীত স্থানে গৌণ জোয়ার এবং বিপরীত স্থানে মুখ্য জোয়ার হলে ওই স্থানে গৌণ জোয়ার সংঘটিত হয়। সুতরাং ‘B’ অঞ্চলেও ‘A’ অঞ্চলের মতো মুখ্য জোয়ার সম্ভব।
শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা