বাংলা ১ম পত্র | আলোচনা

বঙ্গবাণী

কবিতার মূলভাব: মাতৃভাষা বাংলার প্রতি কবি আবদুল হাকিমের গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে এ কবিতায়।

অন্যান্য যে ভাব প্রকাশ পেয়েছে:

১. অন্যান্য ভাষার প্রতি উদার মনোভাব

২. গভীর ধর্মতত্ত্ব (স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত)

৩. মাতৃভাষা সম্পূর্ণরূপে বোধগম্য

৪. মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগহীনদের দেশত্যাগের পরামর্শ

৫. মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞাকারীদের জন্ম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ

৬. দেশপ্রেম

অন্য ভাষার প্রতি উদার মনোভাব

কবি আবদুল হাকিম ছিলেন উদারপন্থী ব্যক্তিত্বের এক মানুষ। তাঁর মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যরা অবজ্ঞা করলেও কবি তাদের ভাষাকে অবজ্ঞা বা ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেননি। বরং কবি বলেছেন, ‘আরবি-ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।’ আবার তিনি বলেছেন, ‘আরবি-ফারসি-হিন্দে নাই দুই মত।’ অর্থাৎ আরবি-ফারসির প্রতি তাঁর কোনো রাগ, ক্ষোভ বা অভিমান নেই।

মাতৃভাষা সম্পূর্ণরূপে বোধগম্য

ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অভাব আছে, এমন ব্যক্তি অর্থাৎ মারফতে জ্ঞানহীন কিছু ব্যক্তি তৎকালীন সময়ে আরবি, ফারসি ভাষাকেই শ্রেষ্ঠ ভাষা মনে করত। কারণ, তাদের ধারণা, এ ভাষায় আল্লাহ-নবির গুণকীর্তন করা হয়েছে, অর্থাৎ আল–কোরআন আল–হাদিস আরবিতে রচিত হয়েছে। তাই তারা অন্যান্য ভাষাকে অবজ্ঞা করত। কিন্তু ভাষা প্রসঙ্গে কবি আবদুল হাকিমের বক্তব্য, পৃথিবীর সব ভাষাই সমান এবং সব ভাষাভাষীর কাছেই তার নিজস্ব মাতৃভাষা শ্রেষ্ঠ। কারণ ‘দেশি ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ’ অর্থাৎ মাতৃভাষা সম্পূর্ণরূপে বোধগম্য বা মাতৃভাষার মাধ্যমে মনের ভাব সর্বোতভাবে প্রকাশ করা সম্ভব।

স্রষ্ঠা সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত

তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু মুসলমান ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং অজ্ঞতার কারণে মনে করত, আল–কোরআন আল–হাদিসের ভাষা যেহেতু আরবি, তাই একজন মুসলমানকে অবশ্যই আরবি ও ফারসি জানতে হবে এবং এ ভাষাতেই স্রষ্টার আরাধনা করতে হবে। কিন্তু কবি আবদুল হাকিম মধ্যযুগের একজন অতি সাধারণ কবি হিসেবে উপলব্ধি করেছেন, স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত। তিনি সব ভাষা বোঝেন। তাঁকে ডাকার জন্য বিশেষ কোনো ভাষার দরকার নেই। যেকোনো ভাষাতেই তাঁকে ডাকা হোক না কেন, তিনি তা বুঝবেন।

‘মারফতে জ্ঞানহীন’দের মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা

তৎকালীন কিছু মুসলমানের ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অভাব ছিল। সেসব ‘মারফতে জ্ঞানহীন’ মুসলমানরা মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলত। এর কারণ হলো—

১. তাদের ধর্মীয় গোঁড়ামি বা ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অভাব

২. বাংলা ভাষার বর্ণমালাগুলো এসেছে ব্রাহ্মীলিপি থেকে, যা তৈরি করেছিলেন ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা এবং

৩. ঐতিহাসিকভাবে এই এলাকা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এবং সুফি সাধকদের তৎপরতায় অনেকে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছিলেন। এসব কারণেই তারা বাংলাকে ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলত।

বাকি অংশ ছাপা হবে আগামীকাল