বাংলা ১ম পত্র

নদীর স্বপ্ন

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ১ম পত্রের ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতা থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে/পাগল আমার মন জেগে উঠে।
চেনা শোনার কোন বাইরে/যেখানে পথ নাই, নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে।
প্রশ্ন:
ক. ‘কারসাজি’ শব্দটির অর্থ কী? ১
খ. কানাই মাঝিকে পাল নামাতে বলেছে কেন? ব্যখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার কোন চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকটি “নদীর স্বপ্ন” কবিতার সমগ্র বিষয়বস্তুকে ধারণ করে না’—বিশ্লেষণ করো। ৪

উত্তর: ক.

‘কারসাজি’ শব্দটির অর্থ ‘কূটকৌশল’।
উত্তর: খ.

সন্ধ্যার দৃশ্য উপভোগ করার জন্য কানাই মাঝিকে পাল নামাতে বলেছে।
বাতাসের সাহায্যে নৌকা চালানোর জন্য পাল ব্যবহার করা হয়। সারা দিন নৌকাভ্রমণ করে এখন একটু বিশ্রাম নেবে কানাই। বিশ্রাম করতে করতে সে মাঝির কাছে গান শুনবে, গল্প শুনবে এবং বিছানা-বালিশ ছাড়াই একটু ঘুমিয়ে নেবে। এ জন্যই সন্ধ্যার সময় কানাই মাঝিকে পাল নামাতে বলে।
উত্তর: গ.

উদ্দীপকে ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার কিশোর কানাইয়ের কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষা লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের কবিমন বৃষ্টির দিনে জেগে ওঠে কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে চায়। এমন দিনে কবির মন যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই ছুটে যেতে চায়। ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার কিশোরের মনের অবস্থাও এ রকম।
‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতায় নদী ও নৌকাভ্রমণ নিয়ে এক কিশোরের কল্পনা রূপায়িত হয়েছে। পুরো কবিতায় নদী ও নৌকাভ্রমণ নিয়ে কিশোর কানাইয়ের আবেগ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছে। কিশোর কানাই তার ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে নদীর পর নদী পার হতে চায়। নৌকার নানা রঙের পাল, নীল রঙের আকাশ, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির উড়ে চলা, রুপালি ইলিশ মাছ, নৌকায় রান্না করা, মাঝির গান গাওয়া, মাঝির কাছ থেকে গল্প শোনা—এসব কিছু কিশোর কানাইয়ের মনে গভীর স্বপ্ন নিয়ে আসে। কানাই নিজেকে পদ্মার রাজা আর তার বোন ছোকানুকে আকাশের রানি মনে করে। এভাবেই আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনার দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতা সাদৃশ্যপূর্ণ।
উত্তর: ঘ.

বিষয়বস্তু ব্যাপকতার দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার সমগ্র বিষয়বস্তুকে ধারণ করে না।
উদ্দীপকের কবিতাংশে আমরা দেখি কবিমন পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগলপারা হয়ে ওঠে। কবির মন কোনো বাধা মানে না। যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে ছুটে চলে। চেনা-অচেনা, জানা-অজানা যেকোনো দিকে চলে যেতে চায় তাঁর মন। কবি ছুটে যেতে চান পথ থাকুক বা না-ই থাকুক। কোনো কাজ নেই, তারপরও কবি যেতে চান অজানার দিকে। কবির কল্পনা কোনোরূপ বাধা মানে না। ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতায় কবির বর্ণনায় এক কিশোরের কল্পনা সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে।
‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার কিশোর কানাই ভ্রমণের প্রতি আকৃষ্ট। বিশেষ করে নৌকাভ্রমণের প্রতি। তার মনে কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষার খুবই প্রবণতা। প্রকৃতির প্রতি তার অনেক টান। তার মনের অনেক ইচ্ছা পূরণ করতে চায়, যার সবই নদীকে ঘিরে। কিশোর কানাই তার ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে নদীর পর নদী ঘুরে বেড়াতে চায়। নৌকায় নানা রঙের পাল উড়িয়ে দিকে দিকে ছুটে চলতে চায়। কিশোর তার মনের আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনা পূরণ করতে চায়। কবিতার এসব দিকের সঙ্গে উদ্দীপকের মিল রয়েছে। ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতায় যেদিকগুলো উদ্দীপকে অনুপস্থিত তা হলো—রুপালি ইলিশ মাছ, নৌকায় রান্না করা, সন্ধ্যায় গান গাওয়া, বোনের প্রতি মমতা ও দায়িত্ববোধ, মাঝির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ইত্যাদি। উদ্দীপকে আমরা শুধু অবাধ বিচরণের কথা শুনতে পাই, কিন্তু কবিতায় কানাই, ছোকানু ও মাঝিকে কেন্দ্র করে কবি এক বিরাট ক্ষেত্র তৈরি করেছেন, যা উদ্দীপকে অনুুপস্থিত। তাই বলা যায, ‘উদ্দীপকটি “নদীর স্বপ্ন” কবিতার সমগ্র বিষয়বস্তুকে ধারণ করে না’—কথাটি সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ।
শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা