বাংলা ১ম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্ন
প্রিয় পরীক্ষার্থী আজ বাংলা ১ম পত্র থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

অতিথির স্মৃতি
নাইমুদ্দিন প্রায় ১০ বছর ধরে তার পোষা হাতি কালা পাহাড়কে দিয়ে লাকড়ি টানা, চাষ করা, সার্কাস দেখানো ইত্যাদি কাজ করে আসছিল। বর্তমানে দারিদ্র্যের কারণে একদিন সে কালা পাহাড়কে বিক্রি করে দিল। ক্রেতা কালা পাহাড়কে নিতে এসে ওর পায়ে বাধা রশি ধরে টানাটানি করেও নাড়াতে পারল না। কালা পাহাড়ের দুচোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। খদ্দের পরের দিন আরও বেশি লোকজন এনে কালা পাহাড়কে নিয়ে যাবে বলে জানিয়ে যায়। কিন্তু ভোরবেলা নাইমুদ্দিন দেখে কালা পাহাড় মরে পড়ে আছে। সে চিত্কার করে আর বলে—‘ওরে আমার কালা পাহাড়, অভিমান করে তুই চলে গেলি।’
ক. শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন পদক লাভ করেন?
খ. লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করল কেন?
গ. কালা পাহাড়ের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, তা লেখ।
ঘ. উদ্দীপকের নাইমুদ্দিন আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারাই উত্সারিত বলে তুমি মনে করো কি? মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: ক.
শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী পদক’ লাভ করেন।
উত্তর : খ.
লেখক অতিথির সঙ্গে, অর্থাত্ কুকুরটির প্রতি ভালোবাসাস্বরূপ তাঁর সময় কাটানোর জন্যে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন।
সুস্থ হওয়ার জন্য লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন। লেখকের সঙ্গে এখানে একটি কুকুরের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এই মমত্ববোধ ছেড়ে একদিন লেখককে বিদায় নিতে হচ্ছিল। কিন্তু রোগের দোহাই দিয়ে লেখক কুকুরটির প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেন, যার ফলে তিনি আরও দিন দুই সেখানে দেরি করলেন।
উত্তর : গ.
কালা পাহাড়ের আচরণের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মানুষের প্রতি পশুর ভালোবাসার স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে।
কালা পাহাড় একটি পশু, যার আচরণ মানুষের সঙ্গে পশুর সম্পর্ককে নির্দেশ করে। মালিকের প্রতি ভালোবাসাস্বরূপ পশুটি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত লড়াই করে গেছে তার মনিবের কাছে থাকার জন্য। দারিদ্র্যর শিকার মালিক নাইমুদ্দিন তাকে বিক্রির হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি, কিন্তু কালা পাহাড় তা না মেনে অন্যের হাতে যাওয়ার আগেই মারা গেছে। এই আচরণ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কুকুরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেখা যায়, লেখক দেওঘরে গিয়ে কুকুরের সঙ্গে যে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তাতে উভয়ের মধ্যে তৈরি হয় এক গভীর ভাবের সম্মিলন। কুকুরটি লেখকের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে, কিন্তু অপর কাউকে দেখলে সে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু একদিন লেখকের চলে যাওয়ার ডাক আসে। তাই সব ফেলে লেখক গাড়িতে উঠলে কুকুরটি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাঁর দিকে। উদ্দীপকের কালা পাহাড়ও কুকুরটির মতো অসহায় ভালোবাসার নমুনা প্রকাশ করে। উভয় প্রাণীর মধ্যেই মানুষের প্রতি ভালোবাসার বিনম্র মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে।
উত্তর: ঘ.
পশুর প্রতি মমত্ববোধ থেকে উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারাই উত্সারিত বলে আমি মনে করি।
উদ্দীপকে নাইমুদ্দিনের মধ্যে আমরা পশুপ্রেম লক্ষ করি। দারিদ্র্যতার জন্যে সে তার পোষা কালা পাহাড় নামক হাতিকে বিক্রি করে দিলেও হাতি তার কাছ থেকে দূরে যায়নি; বরং শেষ পর্যন্ত মনিবের প্রতি অভিমান করে মৃত্যুকেই গ্রহণ করেছে। হাতির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নাইমুদ্দিনের যে আত্মবিলাপ, তা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অতিথির হারানোর বেদনার প্রতিরূপ।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে আমরা উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের মতো গভীর বেদনাবোধ লক্ষ করি। কেননা, লেখক যখন দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য গিয়েছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে একটি কুকুরের সখ্যতা গড়ে ওঠে। তার প্রতি লেখকের ভালোবাসা যেন তীব্র হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ দিকে কুকুরটিকে একা ফেলে চলে আসাতে লেখকের মনেও উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের মতো বেদনাবোধ আমরা দেখতে পাই।
পশুর প্রতি মমত্ববোধ মানুষের চিরকালীন। উদ্দীপক এবং মূল গল্পে যে বোধ আমাদের পশুর প্রতি মমত্ববোধ শেখায়, তা যেন আমাদের চিরচেনা একটি দৃশ্য। উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের পোষা হাতি কালা পাহাড়কে হারিয়ে যে অনুশোচনা, তা লেখকেরই অনুশোচনার প্রতিরূপ। কেননা, নাইমুদ্দিন অভাবের তাড়নায় হাতি বিক্রি করলে শেষে সে পোষা প্রাণীর মমতা বুঝতে পেরেছে এবং সে ব্যথায় সে ব্যথিত হয়েছে। লেখকও অতিথির প্রতি যে ভালোবাসা বা মমত্ব দেখিয়েছেন, কিন্তু শেষে যখন তিনি চলে আসবেন বলে মনে ভাবলেন, তখনই আমরা দেখি অতিথির প্রতি তাঁর মনের মধ্যে এক অজানা মমতা। শেষে লেখকের চলে আসার মুহূর্তটি আমাদের নাইমুদ্দিনের মনের অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেয় লেখক ও সমগ্র গাল্পিক পরিবেশকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারাই উত্সারিত।
শিক্ষক
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা