বাংলা ২য় পত্র

ভাব-সম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থী, ভাবসম্প্রসারণ তিন প্যারা করে লেখাই ভালো। মূল বইকে অনুসরণ করে লেখা হয়েছে ভাবসম্প্রসারণগুলো।
১.
‘এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’
সমাজে একশ্রেণির লুটেরা বিত্তবান প্রবল প্রতাপ নিয়ে বাস করে। তারা সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয়। তারা অর্থ, শক্তি ও দাপটের জোরে অন্যায়কে ন্যায়, ন্যায়কে অন্যায় বলে প্রতিষ্ঠা করে।
মানুষ স্বভাবতই যত পায়, তত চায়। তার চাওয়ার শেষ নেই। যে লাখ টাকার মালিক, সে কোটিপতি হতে চায়। যার কোটি আছে, সে হাজার কোটি পেতে চায়। রাজার বিপুল সম্পদ আছে। তবুও তার রাজ্য জয়ের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। কেননা, তার আরও সম্পদ চাই। আরও ভোগ, আরও বিলাসিতা প্রয়োজন তার। এই আরও পাওয়ার ইচ্ছা মানুষকে অমানুষ করে তোলে। নিজের মানবতাকে বিসর্জন দিয়ে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তারা গরিবের সর্বস্ব কেড়ে নেয়। তারা তাদের ভোগ-লালসা মেটাতে গরিবের সামান্য সম্পদ আত্মসাত্ করে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। ধনীদের এই লোভে সমাজের দীনহীন গরিব মানুষগুলো প্রতিনিয়ত হচ্ছে প্রতারিত; সহায়-সম্বলহীন পথের ফকির। এতে ধনীদের মনে সামান্যতম করুণাও হয় না।
মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের স্ফুরণ ঘটিয়ে নিজ নিজ শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, তাতেই মানুষের তৃপ্ত থাকা উচিত।
২.
করিতে পারি না কাজ/সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,/পাছে লোকে কিছু বলে।
লোক লজ্জা আর সংকোচের ভয়ে যারা নিজেকে আত্মগোপন করে রাখে, তারা সমাজের কোনো শ্রেষ্ঠত্বই অর্জন করতে পারে না। পৃথিবীতে তারা টিকে থাকতে পারে না, চলমান স্রোতের তালে চলতে না পেরে তারা হারিয়ে যায়।
মানুষের জীবন কর্মমুখর। কাজের মাধ্যমেই মানবজীবনের সফলতা আসে। কাজ করতে গেলে ভুল হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এ পৃথিবীতে সবাই কর্মী নয়। কিছু অলস-অকর্মণ্য মানুষ আছে, যারা অন্যের পেছনে লেগে থাকে। তাদের কাজের খুঁত ধরে, অন্যায় সমালোচনা করে। ফলে অনেক সময় কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে—এসব ভেবে তারা বসে থাকে। যার জন্য কাজ এগোয় না। তাই যারা সমাজে অবদান রাখতে চায়, তাদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচককে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে মহত্ কাজ করতে হলে ভয় ও সংকোচকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচককে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল

মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, শিক্ষক
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা