ব্যাকরণ
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশ থেকে প্রশ্নোত্তর ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন: ‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’—আলোচনা করো।
উত্তর: উক্তিটি বিশ্লেষণ: যেসব অব্যয় মূল শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে মিলে বা ধাতুকে অবলম্বন করে ওই ধাতুর নানা অর্থের সৃষ্টি করে, তাদের উপসর্গ বলা হয়। বাংলা ভাষায় ব্যবহূত উপসর্গগুলোর কোন অর্থবাচকতা নেই, শুধু মূল শব্দ বা ধাতুর আগে এরা ব্যবহূত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা শক্তি দৃষ্ট হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: ‘অনা’ একটি উপসর্গ। এর নিজের কোনো অর্থ নেই। কিন্তু ‘আবাদ’ শব্দের আগে ‘অনা’ শব্দটি ব্যবহূত হয়ে ‘অনাবাদ’, অর্থাত্ ‘আবাদ নেই যার’ অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। তেমনি এটা আচারের পূর্বে ব্যবহূত হয়ে অনাচার (আচার বহির্ভূত অর্থে) এবং সৃষ্টির আগে ব্যবহূত হয়ে অনাসৃষ্টি (অদ্ভুত অর্থে)। এরূপে ভিন্ন ভিন্ন অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করেছে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে উপসর্গসমূহের নিজস্ব কোনো বিশেষ অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা বা সংশ্লিষ্ট শব্দের নতুন অর্থ সৃজনের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: অনুসর্গ কাকে বলে? বাংলা ভাষায় অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা আছে কী?
উত্তর: অনুসর্গ: বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনো স্বাধীন পদরূপে আবার কখনো শব্দ বিভক্তির মতো বাক্যে ব্যবহূত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, সেগুলোকে অনুসর্গ বলে।
যেমন: হতে, থেকে, চেয়ে, বিনা ইত্যাদি।
অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা: বাংলা ভাষায় অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
১। অনুসর্গ বিভক্তিরূপে ব্যবহূত হয়। যেমন— গাড়ি ঢাকা থেকে ছাড়ল।
২। অনুসর্গ বাক্য গঠনে সহায়তা করে। যেমন— দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে বাংলা ভাষায় অনুসর্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ, এটা বাক্যের গঠন বিন্যাস ও সুস্পষ্ট মধুরতায় সহায়তা করে।
প্রশ্ন: উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর: উপসর্গ ও অনুসর্গের পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো:
উপসর্গ অনুসর্গ
১। যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে উপসর্গ বলে। যেমন
উপসর্গ গঠিত শব্দ
উপ উপকূল
প্র প্রশংসা ১। বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনো স্বাধীন পদরূপে আবার কখনো শব্দ বিভক্তির মতো বাক্যে ব্যবহূত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন: প্রতি, বিনা, তরে, মাঝে, কাছে, হেতু ইত্যাদি।
(ক) দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে।
(খ) মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
(গ) সকলের তরে সকলে আমরা।
২। উপসর্গ নামবাচক বা কৃদন্ত শব্দের আগে বসে। ২। অনুসর্গ বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দের পরে বসে।
৩। উপসর্গ মূল শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। ৩। অনুসর্গ মূল শব্দের অর্থ ঠিক রাখে।
৪। উপসর্গ বিভক্তির কাজ করে না। ৪। অনুসর্গ বিভক্তির কাজ করে।
৫। উপসর্গ কোনো শব্দের সঙ্গে পৃথকভাবে ব্যবহূত হতে পারে না। ৫। অনুসর্গ পৃথকভাবে ব্যবহূত হয়।
৬। উপসর্গ নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। ৬। অনুসর্গ নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে না।
বিভিন্ন প্রকার উপসর্গযোগে শব্দ গঠনের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
সংস্কৃত উপসর্গযোগে শব্দ গঠন:
আ : আজীবন, আকণ্ঠ, আরক্ত ইত্যাদি।
উপ : উপসর্গ, উপকণ্ঠ, উপআনুষ্ঠানিক ইত্যাদি।
অপি : অপিনিহিত, অপিচ ইত্যাদি।
অতি : অতিশয়, অতিবৃষ্টি, অত্যাচার ইত্যাদি।
অভি : অভিনন্দন অভিসার, অভিরুচি ইত্যাদি।
প্রতি : প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, প্রতিহিংসা ইত্যাদি।
সু : সুকণ্ঠ, সুবর্ণ, সুনজর ইত্যাদি।
# বাকি অংশ ছাপা হবে আগামীকাল
শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা