বাংলা ২য় পত্র

৪ নম্বর প্রশ্ন

প্রিয় পরীক্ষার্থী, আজ বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশের ৪ নম্বর প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রশ্ন: উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।

উত্তর: উপসর্গ: যেসব সুনির্দিষ্ট বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি ধাতু ও শব্দের আগে বসে সাধিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন ঘটায়, তদের বলা হয় উপসর্গ। যেমন: প্র, পরা, পরি, নির ইত্যাদি।

উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা:

শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়: উপসর্গের মাধ্যমে যেহেতু নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি হয়, ফলে ভাষার শব্দসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ভাষার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।

ব্যঞ্জনা বাড়ে: উপসর্গের ব্যবহারে শব্দের ভাব-ব্যঞ্জনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। যেমন: ‘জয়’ বললে শব্দটির যতটা ভাব প্রকাশিত হয়, পক্ষান্তরে ‘বিজয়’ বললে শব্দটির আবেদন অনেকটাই বেড়ে যায়।

প্রকাশক্ষমতা বাড়ে: উপসর্গের ব্যবহারে ভাষার প্রকাশক্ষমতা বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্ভবত এ কারণেই উপসর্গের তুলনা করেছেন মাছের পাখনার সঙ্গে। কারণ, পাখনার সাহায্যে মাছ যেমন ডান-বাঁয়ে বা সামনে-পেছনে চলার জন্য বিশেষ গতি লাভ করে; ঠিক তেমনি উপসর্গের মাধ্যমে শব্দ তার ব্যবহারিক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি ঘটিয়ে থাকে।

অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে: নির্দিষ্ট কোনো শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করলে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট শব্দটির অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে। ফলে শব্দটির প্রচলিত অর্থের আবেদনে যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা। যেমন: ‘তাপ’ থেকে হয় ‘প্রতাপ’ কিংবা পরিতাপ ইত্যাদি।

পরিভাষা সৃষ্টিতে: অনেক সময় উপসর্গের মাধ্যমে পরিভাষাও প্রণয়ন করা হয়। যেমন: Conductor-পরিবাহী, Requisition-অধিগ্রহণ ইত্যাদি উপসর্গের উপযুক্ত গুণাবলি বিবেচনা করে অনেক বৈয়াকরণিক মনে করেন, ‘উপসর্গ কেবল প্রয়োজনীয় নয়, ভাষার পক্ষে পরিহার্য।’

প্রশ্ন: ‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’—আলোচনা করো।

উত্তর: যেসব অব্যয় মূল শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে মিলে বা ধাতুকে অবলম্বন করে ওই ধাতুর নানা অর্থের সৃষ্টি করে, তাদের উপসর্গ বলা হয়। বাংলা ভাষায় ব্যবহূত উপসর্গগুলোর কোনো অর্থবাচকতা নেই, শুধু মূল শব্দ বা ধাতুর আগে এরা ব্যবহূত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা শক্তি দৃষ্ট হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: ‘অনা’ একটি উপসর্গ। এর নিজের কোনো অর্থ নেই। কিন্তু ‘আবাদ’ শব্দের আগে ‘অনা’ শব্দটি ব্যবহূত হয়ে ‘অনাবাদ’, অর্থাত্ ‘আবাদ নেই যার’ অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। তেমনি এটা আচারের পূর্বে ব্যবহূত হয়ে অনাচার (আচারবহির্ভূত অর্থে) এবং সৃষ্টির আগে ব্যবহূত হয়ে অনাসৃষ্টি (অদ্ভুত অর্থে)। এরূপে ভিন্ন ভিন্ন অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করেছে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো বিশেষ অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা বা সংশ্লিষ্ট শব্দের নতুন অর্থ সৃজনের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।

শিক্ষক

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা