বাংলা ২য় পত্র

 অনুচ্ছেদ রচনা
প্রিয় পরীক্ষার্থী, আজ বাংলা ২য় পত্র বিষয়ের অনুচ্ছেদ রচনা দেওয়া হলো।

বৈশাখী মেলা
বৈশাখী মেলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম। নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনেই দেশের শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে এ মেলা বসে। এ মেলা চলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। এক দিন থেকে শুরু করে মাসব্যাপী এ মেলা চলতে থাকে। নতুন বছরে মানুষের আনন্দ-অনুভূতির প্রকাশ ঘটে বৈশাখী মেলার মাধ্যমে। আবহমানকাল থেকেই আমাদের দেশে বৈশাখী মেলা চলে আসছে। এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন উত্সব-অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে বলীখেলা, ঘোড়দৌড়, নৌকাবাইচ উল্লেখযোগ্য। বৈশাখী মেলা সাধারণত খোলা আকাশের নিচে বসে। গ্রামের হাটে, বাজারে, নদীর তীরে, মন্দির প্রাঙ্গণে এ মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, নানা প্রকার কুটির শিল্প, খেলনাসহ হরেক রকমের পণ্যের সমাহার ঘটে এ মেলায়। এ ছাড়া থাকে যাত্রা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাসসহ বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবারও পাওয়া যায় মেলায়। নতুনকে বরণ করার উদ্দেশ্যেই এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা উপলক্ষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রনির্বিশেষে সবার মিলনমেলায় পরিণত হয়। সে জন্য এ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম।

স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এ দেশের সশস্ত্র স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ দিনটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদার অংশ। ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু গণমানুষের রায়কে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। এ দেশের মানুষ তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি আন্দোলন শুরু করে। এ দেশের মানুষের আন্দোলনে ভীত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। দেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের বর্বরতা চালায়। এ দেশের সাহসী বাঙালিও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল বলে ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। প্রতিবছর এ দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ মর্যাদায় পালিত হয়। স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে গৌরবের ও মর্যাদার।

যৌতুক প্রথা
যৌতুক প্রথা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। যৌতুক প্রথা বলতে এমন এক ঘৃণ্য প্রথাকে বোঝায়, যেখানে কনেপক্ষ বরপক্ষকে অর্থ প্রদান করে কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করে। পণ্য কেনার মতোই কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে দর-কষাকষি হয়ে থাকে। সচ্ছল পরিবারের জন্য এটি সাধারণ ব্যাপার হলেও গরিব পরিবারের জন্য তা অনেক কষ্টের। আগেকার দিনে যৌতুক প্রথার রূপ অন্য রকম ছিল। আগে বরপক্ষ কর্তৃক কনেকে নানা রকম অলংকারে সজ্জিত করার পাশাপাশি কন্যার পিতাকে নগদ অর্থ প্রদান করতে হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই রীতিরই উল্টো প্রয়োগ ঘটেছে। ফলে বর্তমানে কনেপক্ষই বরপক্ষকে যৌতুক দিয়ে থাকে। যৌতুক দিতে না পারায় অসংখ্য নারীর জীবন আজ হুমকির মুখে। নারীকে এর জন্য অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার যৌতুকবিরোধী আইন করলেও তা মানছে না অনেকেই। ফলে যৌতুকের করালগ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য নারীর জীবন। তাই যৌতুক প্রথা রোধের জন্য প্রথমত নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে নারীকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতা। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই যৌতুক প্রথা রোধ করা সম্ভব।
শিক্ষক, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা