অধ্যায় ৩
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে যেসব কাজ করছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পদ্মা সেতু প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেখানকার মাটির ধরন, নদীর গতি-প্রকৃতি, সেতুর নকশা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়গুলোর রদবদলও হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে অবস্থার পরিবর্তন হলে পরিকল্পনায় সংশোধনীসহ কতৃর্পক্ষের কী করণীয় তা ঠিক করে রেখেছে, যাতে সহজেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন
ক. প্রকল্প কী?
খ. ভিশন-২০২১ কেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রকৃতিভিত্তিক কোন ধরনের পরিকল্পনা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পরিকল্পনার যে বৈশিষ্ট্যটি ভবিষ্যতে অবস্থার পরিবর্তনকে সহজ করে তোলে তা উদ্দীপকের আলোকে মূল্যায়ন করো।
উত্তর
ক. কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বিশেষ কার্য সম্পাদনের প্রতিটি পরিকল্পনাকে প্রকল্প বলে।
খ. পাঁচ বছরের অধিক সময়ের জন্য যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়, তাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে।
বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার মধ্যে ভিশন-২০২১ অন্যতম। ভিশনের বাংলা অর্থ হলো স্বপ্ন বা দূরকল্পনা। দারিদ্র্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পটি গৃহীত হয়, যা কিনা ২০১১ সাল থেকেই শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি ১০ বছর মেয়াদি। এ জন্য ভিশন-২০২১ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
গ. উদ্দীপকের পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রকৃতিভিত্তিক একার্থক পরিকল্পনা।
যে পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানে শুধু একবার ব্যবহারের জন্য বা একটি মাত্র উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রণয়ন করা হয়, তাকে একার্থক পরিকল্পনা বলে। যেসব কার্যক্ষেত্রে অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হয় বা ফরমায়েশ অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, সেখানে একার্থক পরিকল্পনা উত্তম বলে বিবেচিত হয়। প্রতিষ্ঠানে কোনো বিশেষ অবস্থা মোকাবিলার জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে শুধু একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, যা পূরণ হলে পরিকল্পনার কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রকৃতিভিত্তিক একার্থক পরিকল্পনা।
ঘ. পরিকল্পনার নমনীয়তার বৈশিষ্ট্যটি ভবিষ্যতে অবস্থার পরিবর্তনকে সহজ করে তোলে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি বিধানের সামর্থ্যকে নমনীয়তা বলে। একটি উত্তম পরিকল্পনায় নমনীয়তার সুযোগ থাকা আবশ্যক। সম্ভাব্য যেসব অবস্থার মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে বলে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণীত হয়, তা সব সময় মিলবে এমন আশা করা যায় না। তাই অবস্থার পরিবর্তন হলে যতটা সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা সংশোধন করতে হয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভবিষ্যতে পরিকল্পনার সব বিষয়ের রদবদল হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে অবস্থার পরিবর্তন হলে পরিকল্পনায় সংশোধনীসহ কতৃর্পক্ষের কী করণীয়, তা ঠিক করে রাখা হয়েছে, যাতে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সফল হয়। এরূপ চিন্তা ও কাজের মধ্য দিয়ে পরিকল্পনার নমনীয়তার বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে।
বাস্তব পরিস্থিতি সব সময় এক থাকে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এ অবস্থা আরও বেশি পরিবর্তনশীল হয়ে পড়ে।
তাই সম্ভাব্য পরিবর্তন কী হতে পারে এবং ওই পরিবর্তনে পরিকল্পনাটিকে প্রয়োজনে কী পরিবর্তন আনা হবে, তা আগে থেকে ঠিক করতে হয়, যা নমনীয়তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। উদ্দীপকে সরকার যেভাবে পরিকল্পনা অর্থাৎ পরিস্থিতিকেন্দ্রিক পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছে, তাতে পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো সমস্যা হবে না।