শাশুড়ি হিসেবে আমি কেমন

শাশুড়ি ছেলের বউকে দেখাচ্ছেন পুরোনো অ্যালবাম। ছবি বলছে, কাল এসব আমার ছিল, যা থেকে তোমার। মডেল: লাবণ্য ও দিলারা ইসলাম
শাশুড়ি ছেলের বউকে দেখাচ্ছেন পুরোনো অ্যালবাম। ছবি বলছে, কাল এসব আমার ছিল, যা থেকে তোমার। মডেল: লাবণ্য ও দিলারা ইসলাম

নতুন বউ কেবল যে লাজে কথা বলে না, তা কিন্তু নয়। নতুন বউয়ের মনে লাজের চেয়ে বেশি কাজ করে ভয়। এই সংশয়, আতঙ্ক দূর করতে পারেন শাশুড়ি। নিজের এত দিনের চেনা জগৎ থেকে ভিন্ন পরিবেশে এসে পড়ে মেয়েটি। তখন শাশুড়ি যদি মায়ের মতো বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে মেয়েটির জন্য মানিয়ে নিতে সহজ হয়। বেশির ভাগ সময় মনে করা হয়, শাশুড়ির সঙ্গে ছেলের নতুন বউকে মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে শাশুড়ির যে এগিয়ে আসার দরকার আছে তা অনেকেই আমরা ভুলে যাই।
এ বিষয়ে কথা হয় সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সব সময় দুটি পরিবার ভিন্ন হয়। ভিন্ন পরিবেশে বড় হওয়া মেয়েটির নতুন পরিবেশকে বুঝে নেওয়ার জন্য তাই নিজের কিছু সময় প্রয়োজন। আজকে যিনি শাশুড়ির ভূমিকায়, তাঁর নিজের জীবনেও একসময় এমন দিন এসেছিল। তাই ছেলের বউকে নতুন পরিবেশ বুঝে নেওয়ার ও মানিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু সময় দিতে হবে।’
বিয়ের পর একজন মেয়ের নতুন জীবন শুরু হয়। অপরিচিত মানুষজনের সঙ্গে হঠাৎ করে খাপ খাওয়ানোটা কঠিন। এ ক্ষেত্রে তাকে আপন করে নিতে পারেন শাশুড়ি।
শাশুড়ি আর বউ যদি হয় সাইকেলের দুই চাকা, তাহলে সামনের চাকাটি হলেন শাশুড়ি। তিনি যেদিকে চলবেন, বাড়ির নতুন বউটিও তাঁকে অনুসরণ করবে। ছেলের বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে শাশুড়িদের জন্য রইল মনিকা’স বাঁধন-এর স্বত্বাধিকারী মনিকা পারভীনের কিছু পরামর্শ।
 ছেলের বউ ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর একটি অভ্যর্থনা দিন।
 বিয়ের ঠিক পরপরই একজন মেয়ে বাবার বাড়ি-শ্বশুরবাড়ি এ দুয়ের মধ্যেতার নিজের বাড়ির পরিচয় নিয়ে দ্বিধায় থাকে। দুটো বাড়িই যে তার নিজের, তাকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে দিন।
 মেয়ে তার নিজের মা-বাবা, পরিবার ছেড়ে এসেছে। সে যে এখন থেকে এ পরিবারের একজন, তাকে এই অনুভূতি দিতে যেন ভুল না হয়।
 ছেলের বউ নয়, তাকে মেয়ের মতোই ভাবুন। তাহলে মেয়েও শাশুড়িকে মায়ের ভূমিকায় ভাবতে শুরু করবে।
 আপনার পরিবারের সঙ্গে মেয়ের পরিবারের খাবারদাবার, রান্নাবান্না না-ও মিলতে পারে। সে জন্য তার খেতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না খেয়াল করুন। তাকে জিজ্ঞেস করেও জেনে নিতে পারেন। আবার একদিন সবাই মিলে তার পছন্দের রান্না করা খাবার খাওয়ারও আয়োজন করতে পারেন।
 ছেলের বউ যদি পড়ালেখা কিংবা চাকরি করে, তাহলে ফিরতে দেরি হলে তার জন্য অপেক্ষা করুন। যদি বেশি দেরি হয়ে যায়, আপনারা খেয়ে নিলেও সে ফিরলে খাবারের সময়টায় পাশে বসতে পারেন।
 প্রতিটি পরিবারের কিছু নিজস্ব রীতিনীতি আছে। মেয়েটিকে হঠাৎ করেই সেগুলো মানার বাধ্যবাধকতা দিয়ে দিলে সে ঘাবড়ে যেতে পারে। তাই তাকে ধীরে ধীরে বুঝে ওঠার সময় দিন।
 নতুন বউ যে নিজে নিজেই সবকিছু বুঝে যাবে, এমন নয়। প্রয়োজনে তাকে মাঝেমধ্যে বুঝিয়ে বলুন। সে যেটি করছে তা ভুল নয় বরং আপনি যা বলছেন এটি করলে আরও ভালো হয়, এভাবে বলুন।
 আপনার ছেলের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে বউয়ের পছন্দ-অপছন্দ জেনে নিতে পারেন। এতে আপনার ছেলেও খুশি হবে। বিয়ের পর ছেলের সঙ্গে মায়ের দূরত্ব বেড়ে যায়, এ কথা একেবারেই মিথ্যে করে দিন।
 বউ-শাশুড়ি দুজনে মিলে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। কেনাকাটা করতেও যেতে পারেন। এতে দুজনের হূদ্যতা বাড়বে।
 যেকোনো বিষয়ে দুজনে খোলামেলা আলোচনা করুন। এতে দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা কমে যাবে।
 মাঝেমধ্যে ছেলেকে কৌশলে বলে দিন বউকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে। মাঝেমধ্যে বউকে তার বাবার বাড়ি যাওয়ারও সুযোগ করে দিন।
 বাড়ির যেকোনো উপলক্ষ ও আয়োজনে ছেলের বউয়ের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে দাওয়াত করুন। এতে সে খুশি হবে।
 ছেলের বউয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যান। পরিবারের সবাই যার যার কাজে বেরিয়ে গেলে ঘরে তো প্রাণী আপনারা দুজনই। দুজন দুজনার সুখ-দুঃখের ভাগিদার বনে যান।