শিক্ষার্থীদের নকশায় পোশাকের ঐতিহ্য

শিক্ষার্থীদের করা নকশায় উঠে এসেছে এদেশের ফ্যাশনের বিবর্তন। ছবি: লেখক
শিক্ষার্থীদের করা নকশায় উঠে এসেছে এদেশের ফ্যাশনের বিবর্তন। ছবি: লেখক

বিশাল বড় মঞ্চটার একটা অংশ চলে গেছে দর্শকসারির মাঝ পর্যন্ত। বাজনার তালে তালে ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে মঞ্চের রং। কিছুক্ষণ পরই শুরু হবে ফ্যাশন শো। এই আয়োজনকে আর দশটা ফ্যাশন শোর মতো ভাবলে ভুল করবেন। এখানে মঞ্চের পরিবেশনা আর উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে একটা অন্য রকম যোগসূত্র রয়েছে। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সমাবর্তন উপলক্ষে গত ২৭ নভেম্বর ঢাকার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আর এই আয়োজনের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল ফ্যাশন শো। যে বর্ণিল পোশাকগুলো পরে মঞ্চে মডেলরা ক্যাটওয়াক করেছেন, এগুলো সবই শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইনিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের নকশায় তৈরি।

নতুন ট্রেন্ড তৈরির প্রচেষ্টা ছিল এখানে
নতুন ট্রেন্ড তৈরির প্রচেষ্টা ছিল এখানে

সকালেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ ছিল এই ফ্যাশন শো। মিলনায়তনে হাজির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অতিথি ও অভিভাবকেরা। শুরুতেই এলেন মোগল আমলের রাজকীয় পোশাক পরা দুজন মডেল। তুমুল করতালি আর চিৎকারে তাঁদের স্বাগত জানালেন দর্শকের আসনে বসা শিক্ষার্থীরা। এই ফাঁকে কথা হলো ফ্যাশন ডিজাইনিং বিভাগের ছাত্রী শামস নাবিলার সঙ্গে। নাবিলা বললেন, ‘ফ্যাশন শোর মাধ্যমে আমরা নিজেদের কাজগুলোর মূল্যায়ন করতে পারি। ভালো-মন্দ বিচার করতে পারি। শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে এই পুরো আয়োজন আমরা নিজেরাই করি।’ আয়েশা সিদ্দীকা নামের আরেক শিক্ষার্থীর বক্তব্য, ‘এর মাধ্যমে আমরা যেমন নতুন ট্রেন্ড অনুসরণ করি, তেমনি নতুন ট্রেন্ড চালু করার একটা চেষ্টাও থাকে।’

বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের যে বিশাল সম্ভাবনা, সেখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন এই শিক্ষার্থীরা। অনেক বড় দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক রফিক সিদ্দিকী দাবি করলেন, সেভাবেই শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পোশাক একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাজই হলো নিত্যনতুন পোশাক তৈরি করে ব্যক্তির একটা নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরতে সাহায্য করা। ভৌগোলিকভাবে পোশাকের নকশার একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। এর মধ্যেই দেশীয় পোশাকের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ধাঁচ যুক্ত হয়ে ফিউশন তৈরি হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। এর ফলে তাঁদের সৃজনশীলতা বিকশিত হচ্ছে, আবার নিত্যনতুন ডিজাইনও তৈরি হচ্ছে।’

পোশাকে বাংলার ঐতিহ্য
পোশাকে বাংলার ঐতিহ্য

ফ্যাশন শোর চারটি পর্বের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল ‘ট্রিবিউট টু হেরিটেজ’। শিক্ষার্থীদের করা নকশায় উঠে এসেছে এ অঞ্চলের পোশাকের ইতিহাস-ঐতিহ্য। মোগল আমলের মসলিন-জামদানি থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর পর কেমন করে এখানকার মানুষের পোশাকে লাল-সবুজের একটা আলাদা অর্থ তৈরি হলো, সেটাই উঠে এসেছে ফ্যাশন শোতে। ব্রিটিশ আমলে নীল ও তুলা চাষ, স্বদেশি আন্দোলন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ—এসব কীভাবে আমাদের পোশাকের ধরনের ওপর প্রভাব ফেলেছে, পুরোটাই দেখা হলো এক মঞ্চে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কায়কোবাদ রানা বলেন, ‘সামনে বিজয় দিবসের কথা মাথায় রেখেই ট্রিবিউট টু হেরিটেজ পর্বটা সাজানো হয়েছে। দেশীয় পোশাকের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। ওরা যা জেনেছে, সেটা ফ্যাশন শোর মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরার জন্যই এই আয়োজন।’

নিজেদের নকশা করা পোশাক নিয়ে ফ্যাশন শো আয়োজন করতে পেরে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভীষণ খুশি। সামনে এ ধরনের আয়োজন আরও হবে বলে তাঁদের প্রত্যাশা।