শিক্ষার জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দিতে হবে

মোস্তাফা জব্বার, এম রোকনুজ্জামান, পূর্ণা শ্রেষ্ঠা ও সালাহউদ্দিন আহমেদ

ইন্টারনেট সহজলভ্য না হওয়ায় ও ডিভাইস–সংকটের কারণে করোনাকালে অনলাইন শিক্ষায় বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারির চিন্তা মাথায় রেখে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষার জন্য ইন্টারনেট বিনা মূল্যে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রাথমিকের শিশুদের বিকাশে ইন্টারনেট ছাড়াও (অফলাইনে) ব্যবহার করা যায় এমন অ্যাপগুলোকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুলগুলোতে ছড়িয়ে দিতে হবে।

গতকাল সোমবার বিকেলে প্রথম আলোর সহযোগিতায় ভলান্টারি সার্ভিস ওভারসিজের (ভিএসও) আয়োজনে এক ওয়েবিনারে এসব মত প্রকাশ করেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে ভিএসও স্কুল অ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে আনন্দের সঙ্গে প্রান্তিক শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, সেসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

শিক্ষার জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সেবার পরামর্শকে যৌক্তিক উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগামন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের ৯৯ শতাংশ অঞ্চল এখন ফোর–জি নেটওয়ার্কের আওতায়। তবে স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস হাতে না থাকলে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারে না। স্মার্টফোনের সংকট রয়েছে। এ ছাড়া দেশের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের হাতে ডিভাইস তুলে দেওয়াকে ভয়াবহ বলে মনে করে। তিনি বলেন, ভিএসও অ্যাপের মাধ্যমে আরও বহু ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে শিশুদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম রোকনুজ্জামান বলেন, দূরশিক্ষণে ডিভাইসসহ সম্পদ ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে।

শিক্ষার জন্য অনলাইন ও অফলাইনে ব্যবহার উপযোগী ভিএসও স্কুল অ্যাপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘উস্তাদ মোবাইল’–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইক ডাউসন তুলে ধরেন কীভাবে ডিভাইসে স্থান ব্যবস্থাপনা, ইন্টারনেট সহজলভ্য না হওয়ার সংকট কাটানো সম্ভব। তিনি বলেন, একটি কনটেন্ট অনলাইনে একবার ডাউনলোড করে সেটা চাইলে অফলাইনে শেয়ার করা যায়।

ভিএসওর শিক্ষাবিষয়ক প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা পূর্ণা শ্রেষ্ঠা উপস্থাপন করেন কীভাবে ভিএসও অ্যাপের মাধ্যমে অল্পসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইন–অফলাইন দুইভাবে সেবা পৌঁছানো সম্ভব। তিনি জানান, সাতটি দেশে এই অ্যাপটি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলোয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে ভিএসও অ্যাপের মাধ্যমে।

ডাক ও টেলিযোগামন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের হাতে ডিভাইস তুলে দেওয়াকে ভয়াবহ বলে মনে করে

ভিএসওর শিক্ষা বি‌শেষজ্ঞ মেরি ওয়াটকিনস বলেন, ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে নানা রকম মজাদার জিনিস বানিয়ে শিশুদের আনন্দের সঙ্গে সহজে শিক্ষা দেওয়া যায়।

কক্সবাজারের ভিএসও স্কুল অ্যাপের কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশে ভিএসও স্কুল অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন ভিএসওর শিক্ষা তথ্যপ্রযুক্তিগত উপদেষ্টা আহমেদ আল কাবির।

সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ আফজাল হোসেন সারওয়ার বলেন, সরকার মাত্র এক মাসের মধ্যে দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়।

প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও ইভেন্টসের প্রধান মুনির হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভিএসওর প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রধান (অন্তর্বর্তী) সালাহউদ্দিন আহমেদ।