শিক্ষা নিয়ে সরকারের ‘রূপকল্প’ জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
ফাইল ছবি

দক্ষ-যোগ্য, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধসম্পন্ন পাকাপোক্ত সোনার মানুষ তৈরি করতে চায় বর্তমান সরকার। এমনটা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইন্ডাস্ট্রি (শিল্প) ও একাডেমিয়ার মধ্যে ‘সুষ্ঠু সমন্বয়ের’ ওপর নজর থাকবে।

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আন্তঃহল বক্তব্য প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সহযোগিতা করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে আপনারা একটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই আপনারা সবকিছু শিখবেন এবং শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই মানসম্পন্ন শিক্ষা হবে আর আমরা সোনার মানুষ হব— এটা একটু সোনার পাথরবাটির মতো। আমাদের একেবারে ছেলেবেলা থেকেই জানতে হবে। তাহলেই পাকাপোক্ত সোনার মানুষ হওয়া যাবে। সেজন্য আমরা প্রাকপ্রাথমিক থেকে একেবারে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করছি।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘পৃথিবী এখন অসম্ভব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আজকে আমরা যা শিখছি, দু-চার-পাঁচ বছরের মধ্যে সেই শিক্ষাটা আর কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাহলে আমাকে নতুন প্রযুক্তি শিখতে হবে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রচলিত ধারণা ছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলে আর পড়াশোনার দরকার নেই, কিন্তু সেই ধারণা বদলে গেছে। এখন যুগের প্রয়োজনে নিজেকে দক্ষ, যোগ্য ও সময়ের উপযোগী করে কর্মক্ষম রাখতে জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রয়োজন।’

২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম

প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকার আশাবাদী বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, আগামী বছর (২০২২ সাল) থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলক প্রয়োগে যাচ্ছে। পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করে ২০২৩ সাল থেকে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ চলবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক করা হচ্ছে। পাশাপাশি জোর দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপরে। দীপু মনি বলেন, অভিভাবকেরা মনে করেন পরীক্ষা হলেই বোধ হয় তাঁর সন্তান খুব ভালো শিখতে পারবে। অথচ সারা বিশ্বে যেখানেই মানসম্মত শিক্ষা আছে, সেখানে বলা হচ্ছে— পরীক্ষার চাপ যত কমানো যায়, শিক্ষা তত বেশি মানসম্মত হয়। তাই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতিতে একটা আমূল পরিবর্তন আনছি।

ভবিষ্যৎ বিশ্ববিদ্যালয়

ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় থাকবে— সরকার এমন বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চায় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আমাদের চাওয়া—এখান থেকে যাঁরা ডিগ্রি নিয়ে বের হবেন, তাঁরা যেনো শিক্ষিত বেকার না হন। তাঁরা কর্মক্ষম হবেন, উদ্যোক্তা হবেন, অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা রকম বিজনেস ইনকিউবেটর হবে, নতুন নতুন ধারণা নিয়ে সেখানে চর্চা হবে, সেগুলোকে আবার আমরা বাস্তবজীবনে কাজে লাগাব।’

দীপু মনি বলেন, ‘আমরা সে ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় চাই, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যে একটা সুষ্ঠু সমন্বয় থাকবে। এটি শুরু হবে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন দিয়ে। ইন্ডাস্ট্রির যা প্রয়োজন, যুগের জন্য কর্মজগতের যা প্রয়োজন সেই উপযোগী পাঠ্যসূচি হবে। শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন অনুযায়ী যেমন পড়বেন, একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিও তাঁদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেবে’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভৌত অবকাঠামোর মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) তৈরি করেছে। এর আগে একটা একাডেমিক মহাপরিকল্পনা দরকার। সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই একটা ভৌত মহাপরিকল্পনা হবে। তাহলেই সত্যিকার অর্থে বলা যাবে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর আমরা কী ফল অর্জন করতে চাই। তিনি বলেন, ‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই পারে আমাদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হতে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ। আলোচনা পর্ব শেষে মুহসীন হলের মাঠে ‘মুজিব আমার পিতা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।