* সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যায়-২ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের নমুনা দেওয়া হলো।
নাইম সাহেব এমফিল গবেষক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণা তথ্যের জন্য পুরোনো দিনের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বইপত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। গবেষণার অন্যান্য ধাপ শেষে এসব গৌণ তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
ক. বিজ্ঞান কী?
খ. সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান—ব্যাখ্যা করো।
গ. নাইম সাহেব তাঁর গবেষণায় কোন গবেষণাপদ্ধতি ব্যবহার করেছেন?
ঘ. তিনি এ গবেষণাটির ক্ষেত্রে কী কী পর্যায় বা ধাপ অনুসরণ করেছেন?
উত্তর-ক
সুসংঘবদ্ধ জ্ঞানই বিজ্ঞান। অর্থাত্ যে জ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যুক্তি-প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল তা-ই বিজ্ঞান।
উত্তর-খ
সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান বলা হয়। কারণ সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয়ই হলো সমাজ তথা সামাজিক সম্পর্ক। সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে গিয়ে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক প্রভৃতি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কই সমাজের ভিত্তি।
এ সম্পর্ক জানা গেলেই সমাজকে জানা যাবে। সমাজবিজ্ঞান মূলত এ সম্পর্ক নিয়েই অধ্যয়ন করে। তাই সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান বলা হয়।
উত্তর-গ
নাইম সাহেব তাঁর গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
অতীতের বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে বর্তমানকে অনুসন্ধান করার পদ্ধতিই ঐতিহাসিক পদ্ধতি। অর্থাত্ অতীতের সাহায্যে বর্তমানকে জানার পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষক অতীত সমাজের বিভিন্ন ঘটনা, সামাজিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করে বর্তমান সমাজের গঠন-প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অনুসন্ধান করে।
এ ক্ষেত্রে তিনি তথ্যের উত্স হিসেবে গৌণ (Secondary) তথ্য যেমন বিভিন্ন প্রকাশিত গ্রন্থ, পত্রপত্রিকা, গবেষণা প্রতিবেদন, দলিল-দস্তাবেজ প্রভৃতির সাহায্য নেন। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারসহ অনেকে সমাজ গবেষণায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাচ্ছি নাইম সাহেব তাঁর গবেষণায় তথ্যের উত্স হিসেবে গৌণ তথ্য যেমন পত্রপত্রিকা, বইপত্র প্রভৃতি ব্যবহার করেছেন। অতীত সমাজের বিভিন্ন বিষয় জেনে বর্তমান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ঐতিহাসিক পদ্ধতির সাহায্যে। তাই তাঁর ব্যবহূত পদ্ধতি ঐতিহাসিক পদ্ধতি।
উত্তর-ঘ
তিনি এই গবেষণায় একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি যেসব পর্যায় অনুসরণ করেন তার মধ্যে রয়েছে—
সমস্যা নির্বাচন:
তিনি প্রথমে যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করেতে চান, সেই বিষয় নির্বাচন করেছেন। দেখা যাচ্ছে গবেষণার বিষয় হিসেবে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বেছে নিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ:
এ পর্যায়ে তিনি গবেষণার বিষয়টি নিবিড়ভাবে দেখেছেন এবং সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি গৌণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আগের দিনের বইপত্র, বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ প্রভৃতি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস:
প্রাপ্ত তথ্যকে তিনি লিঙ্গ, বয়স, পেশা প্রভৃতি ভেদে শ্রেণিবিভক্ত করেছেন।
কল্পনা প্রণয়ন:
এ পর্যায়ে তিনি অনুকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। তাঁর গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা তৈরি করেছেন।
সত্যতা বা যথার্থতা যাচাই:
এখানে তিনি যে কল্পনা প্রণয়ন করেছেন তা তাঁর প্রাপ্ত তথ্য দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখেছেন।
ভবিষ্যদ্বাণী:
শেষ পর্যায়ে এসে তিনি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। অর্থাত্ গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
প্রভাষক
এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম