স্কুলে স্কুলে আনন্দ-উচ্ছ্বাস

ফল শোনার পর উচ্ছ্বসিত মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি  ঢাকা বোর্ডে এবার তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে l ছবি: প্রথম আলো
ফল শোনার পর উচ্ছ্বসিত মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বোর্ডে এবার তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে l ছবি: প্রথম আলো

সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে তৈরি হয় আনন্দমেলা। নেচে-গেয়ে ও পরস্পরকে মিষ্টি মুখ করিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্তানের ভালো ফলের আনন্দে যোগ দেন তাদের অভিভাবকেরাও।
গতকাল শনিবার এই চিত্র দেখা গেছে ঢাকার ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এবার প্রথম হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। শুধু সামসুল হক খান নয়, ঢাকা বোর্ডে সেরাদের তালিকায় প্রথম দিকে থাকা প্রতিটি স্কুলেই ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
ঢাকা বোর্ডে প্রথম সামসুল হক খান স্কুল থেকে ৭৭৯ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪০ জন। ফল ঘোষণার পর বেলা আড়াইটায় বিদ্যালয়ের মাঠে মা তাসলিমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছিল বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ফারা আলম মিম। কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ২০১২ সালেও তাঁর প্রতিষ্ঠান এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় হয়েছিল। এরপর থেকেই মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল প্রথম হওয়ার। সেটা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, ভালো ফলের জন্য দেড় বছর আগে স্কুলের সব শিক্ষককে নিয়ে ‘সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিউক্লিয়ার এডুকেশন টিম’ গঠন করা হয়। এতে প্রতি ১৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে দলে আছেন একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসংক্রান্ত সবকিছু দেখাশোনা করেন ওই শিক্ষক। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা খুঁজে বের করে শ্রেণিকক্ষে বা বাসায় গিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের কোথাও প্রাইভেট পড়তে হয় না।

দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে সারা দেশে প্রথম হয়েছে ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সি​দ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা l ছবি: প্রথম আলো
দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে সারা দেশে প্রথম হয়েছে ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সি​দ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা l ছবি: প্রথম আলো


ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে গিয়ে দেখা যায় নেচে-গেয়ে, আনন্দ-উল্লাসে সাফল্য উদ্যাপন করছিল শিক্ষার্থীরা। কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে শিক্ষার্থীদের জটলা থেকে ক্ষণে ক্ষণে ‘রাজউক, রাজউক’ চিৎকার ভেসে আসছিল। ব্যান্ড বাজিয়ে, গান গেয়ে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করছিল তারা। অভিভাবকেরাও যোগ দিচ্ছিলেন ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে।
এবার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ৫৪৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯৬ জন।
কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমামুল হুদা ফলের জন্য শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান। তিনি মনে করেন, বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ায় এবং বারবার পরীক্ষা পেছানোর কারণে ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে। কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছিল, গানের তালে তালে নাচছিল। শিক্ষার্থী রিয়াসাত জামান বলে, হরতাল-অবরোধের কারণে একসময় মনে হচ্ছিল, অনন্তকাল ধরে পরীক্ষা চলবে। অবশেষে ফল পেয়ে ভালো লাগছে। প্রত্যাশিত ফল না হওয়ায় কারও কারও মন খারাপ করে থাকতেও দেখা যায়। বেলা একটা। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটক তখনো বন্ধ। বাইরে শত শত উৎকণ্ঠিত ছাত্র। দেড়টার দিকে ফল এসে পৌঁছাল। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠল শত শত ছাত্র, বেরিয়ে এলেন শিক্ষকেরাও।

ফলাফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের​ ছাত্রীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এবার ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে l ছবি: প্রথম আলো
ফলাফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের​ ছাত্রীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এবার ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে l ছবি: প্রথম আলো


এ বছর ঢাকা বোর্ডে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবস্থান তৃতীয়। পরীক্ষা দিয়েছে ১ হাজার ৫৮১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪১৬ জন। গত বছর স্কুলটির অবস্থান দ্বিতীয় ছিল।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, এক ধাপ পেছালেই ফল খারাপ হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। ছাত্রসংখ্যা কত, কতজন ভালো করল, সেটাও দেখতে হবে। স্কুলের শিক্ষার্থী সাকিব রুম্মাত বলে, স্কুলের অবদান অনেক। স্কুলে প্রতিযোগিতা বেশি। সবাই ভালো করতে চায়। পরীক্ষার আগে তিন দফায় ৩৬টি পরীক্ষা হয়েছে।
পরীক্ষায় ভালো করতে গিয়ে খেলাধুলা, টিভি দেখা, বেড়াতে যাওয়া—সবকিছু ছাড়তে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। তবে তারা কৃতজ্ঞ অভিভাবকদের প্রতিও। সালমা বিনতে হাদি বলে, ‘আমার মাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। স্কুলে খারাপ করলে কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের ডেকে পাঠায়। স্কুল, কোচিং, শিক্ষকের বাসায়ও মা-ই নিয়ে ছুটেছেন। কোথায় কার কাছে পড়লে ভালো করা যাবে এমন তথ্য মা-ই সংগ্রহ করেছেন।’ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবার চতুর্থ হয়েছে। এই স্কুল থেকে ১ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন ছাড়া বাকিরা সবাই পাস করেছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দুজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৯০ জন। বেলা দুইটার দিকে স্কুলের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন। এরপর ঢাকঢোলের তালে তালে শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে উৎসবে মেতে ওঠে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক)