দেশসেরা চার শিক্ষার্থীর একজন সাবাহ বিনতে বায়েজিদ

পেশা হিসেবে যা–ই বেছে নিই, পাশাপাশি আবৃত্তিশিল্পী হব

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ বছরের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সারা দেশে কয়েক ধাপের প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে চার শিক্ষার্থী। তারা হলো বিদ্যালয় পর্যায়ে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সাবাহ বিনতে বায়েজিদ, কলেজ পর্যায়ে রাজশাহী কলেজের মোসা. আফরা মেহজাবীন, মাদ্রাসা পর্যায়ে গোপালগঞ্জ ছালেহিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র মো. রহমাতুল্লাহ ও কারিগরি পর্যায়ে রংপুরের আইডিয়াল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ছাত্র মো. রাগীব ইয়াসির রোহান। ১৯ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠান করে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছে সাবাহ বিনতে বায়েজিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করছে বিদ্যালয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়া শিক্ষার্থী সাবাহ বিনতে বায়েজিদ
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের প্রতিযোগিতায় মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছ, সে জন্য অভিনন্দন। এ নিয়ে তোমার অনুভূতি জানতে চাই।

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: আসলে খুব আনন্দ হচ্ছে। একই সঙ্গে গর্বও হচ্ছে।

আরও পড়ুন
সাবাহ বিনতে বায়েজিদ
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

ঢাকায় পুরস্কার গ্রহণের পর পুরস্কার নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়েছিলে? গিয়ে থাকলে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন ছিল?

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: পরীক্ষা থাকায় পুরস্কার নিয়ে যাওয়া হয়নি। ছুটি শেষে পুরস্কার নিয়ে গিয়ে সবাইকে দেখাব। তবে শিক্ষকেরা অভিনন্দন জানিয়েছেন, দোয়া করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে পারি। বন্ধুরাও খুশি হয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য তোমাকে কী কী করতে হয়েছে, মানে কোন কোন যোগ্যতায় শ্রেষ্ঠ হয়েছ তুমি?

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: পড়াশোনা (ফলাফল), উপস্থিতি, বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমের অর্জন বিবেচনায় এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রশ্ন:

কয় ধাপের প্রতিযোগিতা করে তোমাকে জাতীয় পর্যায়ে আসতে হয়েছে?

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: উপজেলা, জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের প্রতিযোগিতা পেরিয়ে তারপর জাতীয় পর্যায়ে আসতে হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিচারকেরা আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, আমার সনদগুলো দেখেছেন, বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছেন। সেখানে আমাকে উপস্থিত বক্তব্যও দিতে হয়েছে।

প্রশ্ন:

তোমার পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাই। তোমার কি বিদ্যালয়ের পড়াশোনাই যথেষ্ট, নাকি কোচিং-প্রাইভেট পড়তে হয়?

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: আমার ফলাফল মোটামুটি ভালো। বিদ্যালয়েই পড়া হয়। তারপরও বাসায় একজন শিক্ষক পড়ান। এ ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে বাইরে আরেকজন শিক্ষকের কাছে পড়ি। তিনি আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন, বাইরের।

প্রশ্ন:

তোমার সারা দিনটা কেমন করে কাটে, যদি বলতে চাও?

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: আমার একটি ছাদবাগান আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাগানে পানি দিই। এরপর বাসায় এসে নাশতা করে বিদ্যালয়ে যাই। বিদ্যালয় সকাল সোয়া সাতটায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ৫ মিনিটে। বিদ্যালয়ে যতক্ষণ থাকি, সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি দৌড়াদৌড়ি তো থাকেই। তারপর দুপুরের খাওয়া-দাওয়া এবং আবৃত্তির চর্চা কিংবা ড্রয়িং ও অভিনয় চর্চা করি। এসবের পর বাইরের যে শিক্ষকের কাছে পড়ি, সেখানে যাই। প্রাইভেট পড়ে এসে বাগানে মাকে একটু সাহায্য করতে হয়। এরপর আবার বাসায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে হয়। তাঁর কাছে সপ্তাহে ছয় দিন পড়ি। তিনি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পড়ান। ওনার কাছে পড়ার পর অল্প কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই। পরে অন্যান্য পড়ানোসহ বাকি কাজ শেষ করি।

প্রশ্ন:

তোমার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা সম্পর্কে যদি কিছু বলতে।

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: আমি বিজ্ঞান বিভাগে পড়ি। আমার ইচ্ছা প্রকৌশলী হওয়ার। তবে আবৃত্তির প্রতি আমার বেশি মনোযোগ। তাই আমার ইচ্ছা বড় হয়ে পেশা হিসেবে যা–ই করি না কেন, পাশাপাশি একজন আবৃত্তিশিল্পী হব।

প্রশ্ন:

তুমি তো এ বছর মাধ্যমিকে শ্রেষ্ঠ হয়েছ। ভবিষ্যতে অন্যরা যাতে শ্রেষ্ঠ হতে পারে, সে জন্য তাদের উদ্দেশ্যে তোমার কী বলার আছে?

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: আমি বলব, যেটাই করতে হবে, সেটি নিয়মিত ও রুটিনমাফিক করতে হবে। সবকিছুর মধ্যে একটি ভারসাম্য (ব্যালেন্স) রাখতে হবে। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত কাজটি ঠিক হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা করে যেতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না।

প্রশ্ন:

তোমাকে ধন্যবাদ।

সাবাহ বিনতে বায়েজিদ: আপনাদেরও ধন্যবাদ।