আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসের আলোচনা
উচ্চশিক্ষায় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের ভূমিকা
ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন তাঁরা। ইউসিএসআইয়ে এমনভাবে পড়ানো হয়, যেন একজন শিক্ষার্থী দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাটা পান।
‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের ভূমিকা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনায় এ কে এনামুল হক এ কথা বলেন। গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ছিল আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস। এ উপলক্ষে প্রথম আলো ডটকম আয়োজন করে ওই বিশেষ আলোচনার। অনুষ্ঠানটি শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় একযোগে প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হকের উপস্থাপনায় আলোচনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক এবং ডিন অধ্যাপক ড. গোলাম আহমেদ ফারুকী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা করেন। এবারের শিক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘এআই ও শিক্ষা: প্রযুক্তির যুগে মানবিক ক্ষমতা রক্ষা’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এনামুল হক বলেন, ‘এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি স্লোগান। আমরা মনে করি, এআই সবকিছু করে ফেলবে। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। সে যেটি করে, সেটি হচ্ছে তথ্যের সমন্বয়। মানুষের মূল শক্তি হচ্ছে মানবিকতা। এআইয়ের সঙ্গে কাজ করতে করতে যেন আমরা মানবিক ক্ষমতা হারিয়ে না ফেলি, সে বিষয়ে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।’
একই প্রশ্নের জবাবে গোলাম আহমেদ ফারুকী বলেন, ‘এআই মানুষেরই সৃষ্টি। আমার মনে হয়, এআই মানুষের প্রতিযোগী নয়। এআই এবং মানুষ পরস্পরের সম্পূরক। আগে হয়তো এমন একটা অঙ্ক ছিল, যেটা তিন দিন ধরে আমার সমাধান করতে হতো। এখন এআই দিয়ে সেটা তিন মিনিটে সমাধান করা যায়।’
এ কে এনামুল হক এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘এআইয়ের কারণে আমাদের অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছে। এই সময়টায় আমরা অন্য চিন্তা করতে পারছি। অন্য কাজ করতে পারছি। অনেক মনোটোনাস কাজ কিন্তু এআই করে দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এআই মানুষের জন্য উপকারী বলেই আমি বলব।’
এ পর্যায়ে আনিসুল হক প্রশ্ন করেন, ইউসিএসআই বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ এআইকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে?
জবাবে এ কে এনামুল হক বলেন, ‘এখন আমাদের জেনারেশন জেডের বা জেন-জির ছাত্রছাত্রীরা প্রযুক্তি বিষয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। তাদের হাতের মুঠোফোনেই এআই আছে। কিছুদিন আগে আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের চারটা প্রশ্ন করি। দুই ঘণ্টা সময় দিই তাদের উত্তর দেওয়ার জন্য। চ্যাটজিপিটি, বই, সবকিছুই খোলা ছিল। কিছুক্ষণ পর তারা বলল, চ্যাটজিপিটি দিয়ে কাজ হয়নি। কারণ, চ্যাটজিপিটি চিন্তা করতে পারে না।’
এনামুল হক বলেন, ‘এই প্রথম তারা পরীক্ষার হলে চিন্তা করে পরীক্ষা দিয়েছে। যদি চিন্তাই তারা না করতে পারে তাহলে মানুষ হয়ে লাভ কী? আর আমি সারা জীবনই মুখস্থবিদ্যার বিপক্ষে। আমরা চেষ্টা করছি ধীরে ধীরে মুখস্থবিদ্যা থেকে সরে আসতে, পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে ফেলতে।’
গোলাম আহমেদ ফারুকী একই প্রশ্নের জের ধরে বলেন, ‘আমি যখন আমার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য আমেরিকায় ছিলাম, সেখানে ক্লাসে একটি ফিল্ম দেখিয়ে বলা হতো সেটার সমালোচনা করতে। সেখানকার শিক্ষাটাও চিন্তাভিত্তিক। বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধীরে ধীরে পরীক্ষার ধরন বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও যাতে এই চিন্তাভিত্তিক শিক্ষার চল গড়ে ওঠে, সেই দায়িত্ব আমাদের শিক্ষকদের।’
এ কে এনামুল হক আরও যোগ করেন, ‘মানুষ এখন অনেক বেশি সৃজনশীল। আধুনিক মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইউসিএসআই চমৎকার ভূমিকা রাখেছে।’
উপস্থাপক এ পর্যায়ে বলেন, ইউসিএসআই তো বাংলাদেশের প্রথম বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, সেই হিসেবে আপনাদের অনেক দায়িত্ব। আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে কেন আলাদা?
এ কে এনামুল হক বলেন, ‘অবশ্যই, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা এসেছি। এখন শিক্ষাব্যবস্থাটা বৈশ্বিক হয়ে গেছে। ইউসিএসআইয়ে এমনভাবে আমরা পড়াই, যেন একজন শিক্ষার্থী দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাটা পায়।’
গোলাম আহমেদ ফারুকী বলেন, ‘আমাদের কারিকুলামে কো-অপ বলে একটি প্রোগ্রাম আছে। এর আওতায় প্রত্যেক স্টুডেন্ট এক বছর পড়ার পরে একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে। এতে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি তার বাস্তব দক্ষতাও গড়ে ওঠে।’
এ কে এনামুল হককে আনিসুল হক প্রশ্ন করেন, আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান কি দিন দিন কমে যাচ্ছে? আপনার কী মনে হয়?
উত্তরে এ কে এনামুল হক বলেন, ‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলো কিন্তু আলাদা। আমাদের একটা স্বভাব আছে, আমরা প্রথমেই সবাইকে পিএইচডি করিয়ে ফেলতে চাই। তার কোনো প্রয়োজন নেই। মাধ্যমিক শেষ করে একজন ছাত্রের একজন ভালো নাগরিক হওয়ার কথা। সেভাবেই শিক্ষাব্যবস্থাটা সাজানো হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রথমেই তাকে ভয় পাইয়ে দিই।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন অনেক কম। এই বেতনে ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। শিক্ষার তাহলে মান উন্নয়ন হবে কীভাবে? আরও একটা ব্যাপার, যেমন অঞ্চলভিত্তিক ক্যালেন্ডার। বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল বন্যাপ্রবণ। সেখানে শীতকালীন ছুটি না দিয়ে বর্ষাকালীন ছুটি দিলেই কিন্তু সমাধান হয়। এই পরিবর্তনগুলো করতে হবে।’
উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, যদি ইউসিএসআইয়ের ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েদের ভর্তি হতে হয়, তাহলে কী করতে হবে?
জবাবে গোলাম আহমেদ ফারুকী বলেন, ‘ইউএসসিআইয়ে ভর্তি হতে হলে এসএসসি–এইচএসসিতে জিপিএ–৫ থাকতে হবে। একটা প্লেসমেন্ট টেস্ট হয়, সেই টেস্টে আমরা ইংরেজির ওপর দক্ষতাটা বোঝার চেষ্টা করি। সেটার ওপর বেইজ করে আমরা স্কলারশিপও দিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের যে মূল ক্যাম্পাস আছে, সেই ক্যাম্পাসের সঙ্গে প্রায় ৩০০ দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ আছে। ফলে এখানে পড়তে এলে একজন শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বাদটা পাবে।’
উপস্থাপক এ পর্যায়ে এ কে এনামুল হককে প্রশ্ন করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে তিনি কিছু বলতে চান কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির মূল শক্তি হচ্ছে ভালো একজন শিক্ষক। আমি সবাইকে এটাই বলতে চাই, সন্তানকে ভালো শিক্ষকের কাছে পাঠান। আপনি নিজে এসে দেখুন, সন্তান কোথায় শিক্ষা গ্রহণ করছে। এটা সবচেয়ে জরুরি আমার কাছে।’