উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

শিক্ষক হিসেবে অবসরের পর উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক মো. নুরুল আলম।

  • ১ মার্চ নুরুল আলমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৭ এপ্রিল তাঁকে দেওয়া হয় সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্ব।

  • ‍২৯ জুন তাঁর চাকরির বয়স শেষ হয় এবং তিনি অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলমের দায়িত্ব পালনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধ্যাপক হিসেবে গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে গেছেন তিনি। এ অবস্থায় তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েও পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরও উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

আগের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের মেয়াদ হওয়ায় গত ১ মার্চ সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) মো. নুরুল আলমকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল তাঁকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক নুরুল আলমকে ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট চার বছরের জন্য সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে নিয়োগ দেন আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী ১৩ আগস্ট পর্যন্ত তাঁর এ পদে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু এরই মধ্যে ২৯ জুন তাঁর চাকরির বয়স শেষ হয় এবং তিনি অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান।

তবে এর আগেই ৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধ্যাপক নুরুল আলমের চাকরির বয়স পূর্ণ হওয়ায় বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। চিঠিতে মূল পদে (অধ্যাপক) ফিরে অবসরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সহ-উপাচার্য পদের মেয়াদের বাকি মেয়াদ (১৩ আগস্ট পর্যন্ত) শেষ করার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে উপাচার্যের সাময়িক দায়িত্ব পালনের বিষয়েও নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ ছাড়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে এক দিনের জন্য (অধ্যাপক নুরুল আলমের অবসরের দিন) উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতেও বলা হয়। তবে ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এ অবস্থায় গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় নুরুল আলমের অবসরের দিন রাশেদা আখতারকে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে অধ্যাপক নুরুল আলম ২৯ জুন বিভাগে যোগদান করে ৩০ জুন থেকে পুনরায় উপাচার্য (সাময়িক দায়িত্ব) ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্চের সমন্বয়ক রায়হান রাইন মনে করেন, আচার্যের নির্দেশনা ছাড়া এ বিষয়ে সিন্ডিকেট কোনো মতামত দিলে সেটি আচার্যের কর্মপরিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সহ-উপাচার্য হিসেবে নুরুল আলমের নিয়োগপত্রে চাকরির বয়স পূর্ণ হওয়ার পর এই পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ও কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ফলে তাঁর দায়িত্ব পালনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠতে পারে না।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাঁর স্থলে অন্য কেউ রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন—এমন নজির বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক নুরুল আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ১২ আগস্ট

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ বা আদেশে চলা চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল (তিনজনের) নির্বাচনের মাধ্যমে সেখান থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম আছে। এ জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১২ আগস্ট সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ জন সিনেট সদস্যকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানোর প্রক্রিয়া চলছে।