চার উপজেলার ২৩ স্কুল: প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং করে

সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়ছবি: প্রথম আলো

দেশের দুর্যোগপ্রবণ চার উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর করা এক গবেষণার তথ্য বলছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং করে। আর কোচিং-প্রাইভেট টিউশন ও গাইড বইয়ের জন্য অভিভাবকদের মাসে ২০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

খুলনার বটিয়াঘাটা ও দাকোপ এবং বাগেরহাটের মোংলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী-অভিভাবক মিলিয়ে মোট ৮০৪ জনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করেছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। গবেষণায় আরও কয়েকটি সংস্থা সহযোগিতা করেছে।

আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটির তথ্য তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে ‘শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে জাতীয় নীতি সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম। তিনি জানান, গত অক্টোবর মাসের তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তথ্য নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গবেষণার অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কোচিং করে। স্কুলশিক্ষকের কাছে কোচিং বা টিউশন নেয় ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে দেওয়া কোচিং নেয়। স্কুল থেকে কোচিংয়ের জন্য গড়ে ৩৬৭ টাকা, নিজ উদ্যোগে করা কোচিংয়ের জন্য ৮৩৪ টাকা, স্কুলশিক্ষকের কাছে কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনের জন্য মাসে ৫২১ টাকা ব্যয় করতে হয়।

১ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে দেওয়া গাইড বই ব্যবহার করে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের গাইড বই সরবরাহ করা হয় না।

গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আলোচকদের কেউ কেউ গবেষণার কিছু দিক (দুর্বল) নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সে জন্য প্রস্তুতির কথা বারবার আসছে। প্রস্তুতি ঠিকমতো না হলে বড় বিপদের আশঙ্কার কথাও বললেন তিনি।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রঞ্জন সাহা পার্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্চ ফেলো সিবান শাহানা, স্ট্রিট চাইল্ডের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ হৃদয় প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা।