নবম শ্রেণিতে পড়তে হবে অষ্টমের পড়া

২০২১ সালের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ঘাটতি পূরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনা জমা।

  • তিন বিষয়ে মোট ৪৭টি অতিরিক্ত ক্লাস করতে হবে।

  • অতিরিক্ত ক্লাস হবে প্রতি বৃহস্পতিবার। থাকবে অ্যাসাইনমেন্টও।

  • শিগগিরই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ফাইল ছবি

করোনা মহামারিকালে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন বিষয়ে পড়াশোনায় যে ঘাটতি হয়েছে (শিখনঘাটতি) তা পূরণ করতে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার একটি করে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে। তিন বিষয়ে মোট ৪৭টি অতিরিক্ত ক্লাস করতে হবে।

গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীরা এখন নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের অষ্টম শ্রেণিতে ঘাটতি হওয়া ক্লাসগুলো এ বছর নবম শ্রেণিতে ও আগামী বছর দশম শ্রেণিতে করাতে হবে। ওই শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শিক্ষার ঘাটতি পূরণে বিস্তারিত একটি কর্মপরিকল্পনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অতি সম্প্রতি জমা দিয়েছে। সেখানেই অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়াসহ ঘাটতি পূরণে আরও কী কী করতে হবে তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এনসিটিবি এই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দিয়েছে।

কর্মপরিকল্পনাটি এখনো তাঁর হাতে আসেনি। হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. আবু বকর ছিদ্দীক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মপরিকল্পনাটি তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। এখন মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

২০২১ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে কী মাত্রায় শিখনঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা উঠে আসে বেডুর ওই গবেষণায়। ওই গবেষণার তথ্য বলছে, মহামারিকালে অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে মধ্যম ও উচ্চমাত্রায় শিখনঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা পূরণ করতে হবে। তবে জেলা বিবেচনায় পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ।

যা আছে কর্মপরিকল্পনায়

গবেষণায় ওই তিন বিষয়ে ৮২টি বিষয়বস্তুর (শিখনফল) ক্ষেত্রে মধ্যম ও উচ্চমাত্রার ঘাটতি চিহ্নিত হয়েছে। এনসিটিবি বলছে, প্রতিটি শিখনফলের জন্য পৃথক ক্লাসের প্রয়োজন নেই। একাধিক বিষয়বস্তুর সমন্বয়ে একটি ক্লাস করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাংলায় ১৫টি, ইংরেজিতে ১৭টি এবং গণিতে ১৫টি মিলিয়ে মোট ৪৭টি অতিরিক্ত ক্লাস পরিচালনা করতে হবে।

প্রতিটি অতিরিক্ত ক্লাসের সময় হবে ৪০ মিনিট। ছুটি ছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিত ক্লাস রুটিনে একটি করে অতিরিক্ত ক্লাস সংযোজন করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অতিরিক্ত প্রতিটি ক্লাসের জন্য ৫০০ টাকা প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে যেহেতু ঘাটতি থাকা শিক্ষার্থীর হার অনেক বেশি, তাই ওই সব এলাকার জন্য আরও বেশিসংখ্যক অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে বলে উল্লেখ করেছে এনসিটিবি।

এ জন্য ওই সব এলাকায় এই বছর ও আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৩) জন্য খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া দুর্বল তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) অবকাঠামোর জন্য এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা করোনাকালে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ নিতে পারেনি। তাই অধিক মাত্রায় শিখনঘাটতি হয়েছে। এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় দ্রুত আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করতেই হবে। না হলে এসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তরে ধাক্কা খাবে।
এস এম হাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক

অতিরিক্ত ক্লাসের পাশাপাশি এসব শিক্ষার্থীর জন্য করোনাকালের মতো অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত বিষয়ে বাড়ির কাজ) কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলেছে এনসিটিবি। এ ক্ষেত্রে বেশি ঘাটতি আছে এমন বিষয়বস্তুর ওপর প্রতিটি বিষয়ে ৫টি করে মোট ১৫টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া প্রয়োজন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, কর্মপরিকল্পনাটি এখনো তাঁর হাতে আসেনি। হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিরাময়মূলক ক্লাস অন্য শ্রেণির জন্যও প্রয়োজন

এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, গবেষণায় শুধু অষ্টম শ্রেণির তিন বিষয়ের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রভাবে সব শ্রেণির সব বিষয়েই কোনো না কোনো মাত্রায় শিখনঘাটতি হয়েছে। তাই অন্যান্য শ্রেণি ও বিষয়েও নিরাময়মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজন আছে।

আর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাময়মূলক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করতেই হবে।

না হলে এসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তরে ধাক্কা খাবে। এ ঘাটতি শুধু অষ্টম শ্রেণিতে নয়, অন্য শ্রেণিতেও হয়েছে। তাই অন্যসব শ্রেণির শিখনঘাটতিও পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।