নান্দনিক ভবনে অন্য রকম ক্যাম্পাস

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় ৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ক্যাম্পাস।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মিশেলে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ১৩ তলাবিশিষ্ট অনন্য ভবন
ছবি: খালেদ সরকার

আশপাশে ছোট–বড় অসংখ্য ভবন। এর মধ্যে বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা বহুতল একটি ভবন আলাদা করে চোখে পড়ে। ভেতরে-বাইরে খোলামেলা জায়গা আর আধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে গড়া ভবনটি দেখেই বোঝা যায় এটি অন্য ভবনের চেয়ে ব্যতিক্রম। আছে দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরি ও গোছানো শ্রেণিকক্ষ। ছাদে খেলার মাঠ ও জগিংয়ের ব্যবস্থা।

ভেতরে আলো ও বাতাসের কমতি নেই। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) খুব একটা ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ওপরের তলাগুলোতে ওঠানামার জন্য লিফটের পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক চলন্ত সিঁড়ি। কার্ড পাঞ্চ করে শিক্ষার্থীসহ অন্যরা ভবনের ভেতরে ঢুকে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছেন, নামছেন।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় সাত একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ক্যাম্পাস। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি দেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ‘ইনার সিটি ক্যাম্পাস।’ এই ক্যাম্পাস প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভবনের নিচে কথা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রী নাবিলা হোসেনের সঙ্গে। এত দিন তাঁদের ক্লাস হতো মহাখালী ক্যাম্পাসে। মাস তিনেক হলো এই ক্যাম্পাসে এসেছেন তাঁরা। আগের ক্যাম্পাসের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে বললেন, ‘নতুন এই ক্যাম্পাস অনেক খোলামেলা, মনে হয় না কোনো ভবনের মধ্যে আছি।’

অষ্টম ও নবম তলায় গিয়ে দেখা গেল, বিরাট জায়গাজুড়ে খুবই সাজানো-গোছানো লাইব্রেরি। সেখানে পড়ার জায়গা পরিপাটি করে সাজানো। পড়ার জন্য ভিন্ন রকমের সিঁড়িও করা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনা করতে দেখা গেল। আধুনিক এই লাইব্রেরিতে ছাপা বইয়ের পাশাপাশি আছে ই-বুক। লাইব্রেরিতে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের দেওয়া বইগুলো নিয়ে তাঁর নামে একটি কর্নার চালু করা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান হাসিনা আফরোজ প্রথম আলোকে জানালেন, প্রায় ৫০ হাজারের মতো ছাপা বই এবং আরও প্রায় ৫০ হাজারের মতো ই-বুক আছে। লাইব্রেরিতে প্রায় প্রতিদিন এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী আসেন। দলগতভাবে আলোচনার জন্য আছে ১৩টি কক্ষ। শিক্ষার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেও লাইব্রেরির সুবিধা নিতে পারেন। লাইব্রেরিতে একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি ব্র্যাকের পুরোনো সব গবেষণাগুলোও বই আকারে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া স্থাপন করা হয়েছে ‘ডিজিটাল স্কলারশিপ ল্যাবরেটরি’। এর মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবেন।

শ্রেণিকক্ষগুলোও সাজানো-গোছানো। ছয়তলায় বিরাট জায়গাজুড়ে ক্যাফেটেরিয়া। একজন কর্মকর্তা জানালেন, ক্লাসরুমগুলোতে এসি নেই। কিন্তু এমন প্রযুক্তি দিয়ে ভবনটি করা হয়েছে, যাতে বাইরের বাতাস আসতে পারে, ফলে গরম লাগে না।

বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন কর্মকর্তা বললেন, ১৩ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটিতে ৭ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ। অন্য তলাগুলোর মধ্যে একটিতে আছে মেডিকেল সেন্টার। অন্যগুলোতে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিস।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই ভবনের নকশা, নির্মাণ, পরিবেশ সচেতনতা বিষয়গুলো নিয়ে সিঙ্গাপুর, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা কাজ করেছেন। ভবনটিতে ‘ক্রস ভেন্টিলেশন ও হাইব্রিড থার্মাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের’ মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় ভবনটিতে সব দিক থেকে আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ‘অ্যারো ডায়নামিক ফিন’ ভবনের ভেতরে বাতাসের সর্বোচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত করে। আর ‘হাইব্রিড কুলিং সিস্টেম’ ক্লাসের ভেতরে বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে আসে। এসবের ফলে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের নির্ভরতা কমে এসেছে, যা এই ভবনের ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। ভবনের ছাদে রয়েছে ১ দশমিক ৪ মেগাওয়াট পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তিসম্পন্ন সোলার প্যানেল, যা এই ভবনের চাহিদার ২৫ শতাংশ। অত্যাধুনিক এবং নান্দনিক এই ভবনের বেশির ভাগ জায়গা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

কয়েক দিন আগে এই ক্যাম্পাস নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে শিক্ষা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চা হবে। প্রকৃতি এবং আধুনিক স্থাপত্যের মিশেলে এই নতুন ক্যাম্পাসটি গড়ে তোলা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জীবন সম্পর্কে অন্যভাবে ভাবতে শেখাবে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এই ক্যাম্পাস নিয়ে শিক্ষার্থীরা দারুণ খুশি। এখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের সময় বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এমনভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে, যেটা অতুলনীয়।