শিক্ষায় এত বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হওয়া উচিত

‘শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এতে মানসম্মত শিক্ষা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষায় এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে শিক্ষায় বাজেট বাড়াতে হবে। আসন্ন অর্থবছরে দেশের মোট বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা দরকার। এরপর সেটি আরও বাড়াতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ যদি শতাংশে দেখা হয়, তাহলে হয়তো কম। কিন্তু টাকার অঙ্কে দেখলে তা বেশি। তবে তিনিও অন্যদের অভিমতের সঙ্গে একমত যে শিক্ষায় আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। আগামী দিনে সরকার এগুলো বিবেচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

আলোচনায় উঠে আসা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘সমস্যাগুলো বলছেন। কিন্তু কীভাবে সমাধান করবেন, সেটি কিন্তু কেউ বলছেন না। আপনারা বলছেন টাকা কম, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হচ্ছে না। অনেক রকম সমস্যার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সম্ভাবনা কীভাবে জাগিয়ে তুলতে পারি, সেটি কিন্তু আপনাদের বলতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ সবাই গ্রহণ করেছিল। বিরোধীরাও খুব একটা বিরোধিতা করেনি। তারপর বাস্তবায়নে যখন এল, তখন মূল বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নতুন নতুন বিষয় যেমন পঞ্চম শ্রেণিতে পরীক্ষা (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা) ঢুকিয়ে দেওয়া হলো; যা শিক্ষানীতিতে ছিল না। বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে এত বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে যে পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা হবে। কিছুদিন পরে আবার হবে না। এখন বন্ধ করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে আবারও নাকি কী ধরনের পরীক্ষা হবে। এভাবে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে তাহলে মানসম্মত শিক্ষা কী করে হবে? হতে পারে না।

খলীকুজ্জমান বলেন, ‘একটার পর একটি পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি, জাতি হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কীভাবে শিক্ষা এগোবে। সুতরাং এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হওয়া উচিত। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণি শেষে পরীক্ষা বন্ধ হয়েছে, এটি যেন পুনরায় চালু না করা হয়।’

মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেটের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ, শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। সেই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগের জায়গা থেকে যেন সরে আসা না হয়, সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।

স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করা এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ। তিনি বলেন, এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছা. নূর জাহান খাতুন বলেন, এসএসসি পর্যন্ত এখনো ১৭ রকমের শিক্ষাব্যবস্থা আছে, যা একমুখী হওয়া উচিত। আরেকজনের দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বইয়ের মুদ্রণ আসলেই খারাপ। বাচ্চাদের সামনে লজ্জা পেতে হয়। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব করেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় শিক্ষা বাজেটবিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষার বাজেট একটি বৃত্তের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। আসন্ন অর্থবছরে (২০২৪-২৫) মোট বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ করা এবং ২০২৬ সালের বাজেটে সেটি ২০ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আরও কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সুবিধাবঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষার্থীও কথা বলেন। এ ছাড়া একাধিক অভিভাবক ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা মতামত তুলে ধরেন।