এবার ‘ভিক্ষুকেরাও’ বিক্ষোভে নামল। রাস্তা আটকে দাবি তুলল, তাদের কাছে আর ‘মাফ’ চাওয়া যাবে না। বিকাশ নম্বর আছে, প্রয়োজনে ‘বিকাশে’ ভিক্ষা দেবেন। এক ‘ভিক্ষুক’ বলল, হাত পাতলেই বলেন, ‘মাফ করেন, মাফ করেন’, এ শব্দটিই আর শুনতে চায় না তারা। বাসাবাড়ির গৃহকর্মীরাও রাস্তায় নেমেছে মিছিল নিয়ে। কী দাবি, তাদের আর ‘বুয়া’ বলা যাবে না। দিন বদলেছে, এখন ‘ম্যাডাম’ ডাকতে হবে। কাপড় কাচতে কাচতে হাত শেষ, তাদের ‘ওয়াশিং মেশিন’ লাগবে, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার মেশিন লাগবে ঘর মুছতেও।
পাঠক, না, বাস্তবে এমন কিছু এখনো হয়নি। এটি একটি মঞ্চনাটিকার খণ্ডাংশ। এমন অনেক উদ্ভট দাবি, উদ্ভট সংগঠনকে প্রতীকী করে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের নবীনবরণ ও বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাটিকার মাধ্যমে তুলে ধরেছে। এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশে সাম্প্রতিক সময়ের এই চিত্র তুলে ধরেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাটিকার শুরুতে এই সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের ‘যৌক্তিক-অযৌক্তিক’ দাবি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়গুলো বিদ্রূপাত্মকভাবে তুলে হয়।
ভিক্ষুক সোসাইটি, বুয়া সমাবেশ, অটো রিকশাচালক, সিকিউরিট গার্ড পরিষদ (প্রতীকী) সংগঠনগুলোর নানা দাবিতে বিক্ষোভের পর নাটিকার শেষ পর্বে মিছিল নিয়ে মঞ্চে আসে শিক্ষার্থীদের একটি দল। তাদের দাবি, ‘অটো পাস চাই’। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অটো পাস কেন, পড়ালেখা করোনি? জবাব এল, ‘আন্দোলন করেছি’। আবার প্রশ্ন, ‘আন্দোলন তো মাত্র কয় দিন, সারা বছর কী করেছ?’ ছাত্রদের জবাব, খাইছি, ঘুরছি, প্রেম করছি—তাতে আপনার কী। পাশ থেকে আরেকজন বলল, ‘আমি সমন্বয়ক ছিলাম। দাবি না মানলে আন্দোলন চলবে।’
শেষে ছাত্রদের দাবির মুখে ‘অটো পাস’ ঘোষণা করা হলো। ছাত্ররা খুশিতে লাফালাফি করে মঞ্চ ছাড়ল, কিন্তু অভিভাবকেরা ভীষণ মন খারাপ করলেন। শিক্ষার্থীরা নাটিকাটির নাম দিয়েছে ‘তামাশা’, যা এই সময়ে খণ্ডচিত্র হয়ে ফুটে উঠল।
কলেজের ব্যবস্থা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের পরিকল্পনায় নাটিকাটিতে অভিনয় করেছে দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নাজিয়া আমরিন ও তাঁর দল। এ রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল সকালে মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস মাঠে নবীনবরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী-২০২৪ হয়। তিন ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে ছিল ছাত্রছাত্রীদের একক ও দলগত গান, নৃত্য, নাটিকা, ফ্যাশন শোর মতো মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। শিক্ষার্থীদের পর আমন্ত্রিত অতিথি ‘পাওয়ার ভয়েজ’ খ্যাত কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া সংগীত পরিবেশ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এবারে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকার সাবেক বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল বারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়বে, যা হবে মানবিক, দুর্নীতিমুক্ত এবং বৈষম্যহীন।’
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) নুরন নবী, মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুলের নির্বাহী অধ্যক্ষ মিসেস রিফাত নবী আলম, কলেজের উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে কলেজের সব উপাধ্যক্ষ, পরিচালক, শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
পরে বার্ষিক পাঠ্যক্রম ও সহপাঠ্য কার্যক্রমে নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য প্রধান অতিথি আবদুল বারী ও বিশেষ অতিথি কর্নেল (অব.) নুরন নবী কৃতী ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।