কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ২১৯ পদের ১৫৪টিই শূন্য

এই শিক্ষা বোর্ডে ৩৯ বছর ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় বোর্ডের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড
ফাইল ছবি

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব দেব দুলাল দত্ত। তিনি নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে সনদ ও রেকর্ড শাখা, কলেজ শাখা ও আইন শাখার দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু দেব দুলাল দত্ত নন, বোর্ডের অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ২১টি শাখায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

বোর্ডের ২১৯টি পদের মধ্যে ১৫৪টি পদই শূন্য। ৩৯ বছর ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় বোর্ডের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে।

বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের পর বছর নিয়োগ বন্ধ থাকায় শূন্য পদগুলো পূরণ না হওয়ায় কাজ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। শিগগিরই বোর্ডের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে।

বোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ বলেন, ১৯৬২ সালের ২ নভেম্বর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই বোর্ডে ২১৯টি পদের মধ্যে ১৫৪টি শূন্য। কর্মরত আছেন ৬৫ জন। প্রথম শ্রেণির ২৪টি পদের মধ্যে ৫টি শূন্য, দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯টি পদের মধ্যে ৮টি, তৃতীয় শ্রেণির ১১৫টি পদের ১০২টি ও চতুর্থ শ্রেণির ৬১টি পদের মধ্যে ৩৯টি শূন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বেশির ভাগ পদ শূন্য থাকায় সার্বিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

বোর্ডের উপসচিব এ কে এম সাহাব উদ্দিন (প্রশাসন) বলেন, বর্তমানে কর্মরত ৬৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে ১৪ জন নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে একাধিক শাখার কাজ করছেন। এর মধ্যে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) মো. শফিকুল ইসলাম অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সনদ যাচাই, ফ্রেশ ও ডুপ্লিকেট কপি, সনদ ও রেকর্ড শাখার; উপসচিব (প্রশাসন) এ কে এম সাহাব উদ্দিন নিরাপত্তা ও মনিহারি শাখা; উপসচিব (একাডেমিক) মোহাম্মদ সাফায়েত হোসেন ক্রীড়া কর্মকর্তা; উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম এফএসএম (ফরম স্টেশনারি অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) শাখায়; হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম হুসেন অডিট কর্মকর্তা; সহকারী প্রোগ্রামার সুমন রায় চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রঘুনাথ গাঙ্গুলী সনদ ও রেকর্ড শাখা; সহকারী সচিব দেব দুলাল দত্ত সনদ ও রেকর্ড শাখা, কলেজ শাখা ও আইন শাখা; একান্ত সচিব মো. মোজাম্মেল হক হিসাব খরচ শাখা; সহকারী মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম হিসাব জমা শাখা; ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল সুপারভাইজার মো. আমিনুল ইসলাম এফএসএম শাখা; সেকশন কর্মকর্তা মো. ছদরুল ইসলাম আকন্দ সহকারী ক্রীড়া কর্মকর্তা; উচ্চমান সহকারী মো. সিরাজুল ইসলাম সচিবের একান্ত সচিব ও মনিহারি শাখা; অফিস সহকারী মো. জয়নাল আবেদীন নিরাপত্তা ও কলেজ শাখায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

গত সোমবার দুপুরে বোর্ডের সনদ ও রেকর্ড শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, সেবাগ্রহীতাদের জটলা। কিন্তু সেখানে লোকবল কম। ওই শাখার একজন কর্মচারী বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই শাখার কোনো ব্যক্তি ছুটিতে গেলে ওই দিন কাজ বন্ধ থাকে।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের পর বোর্ডে কোনো নিয়োগ হয়নি। ২০১৯ সালের ২৩ মে বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নিয়োগযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণির ৬৩টি শূন্য পদে লোকবল নিয়োগের জন্য অনুমতি/ছাড়পত্র চাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বছরের ২৬ নভেম্বর ৪৩টি পদে লোকবল নিয়োগের অনুমতি দেয়। এরপর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জামাল নাছের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬৩টি শূন্য পদে নিয়োগের অনুমতিপত্র নরায়নের চিঠি দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যথাসময়ে নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে নিয়োগসংক্রান্ত প্রাথমিক কার্যাবলি সম্পাদন করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি এগোয়নি।

বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জামাল নাছের বলেন, ‘জনবলসংকটে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। একেকজনকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দুই বা ততধিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জনবল নিয়োগের অনুমতি/ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। অনুমতি পেলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’