শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে যাবে প্রাথমিকের ফল, আবেদন ফি দ্বিগুণ

ছবি: সংগৃহীত

গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনের ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে এ ফলাফল জানানো হবে। শিক্ষার্থীরা ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত আবেদন করতে পারবেন। তবে একই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীর ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে আবার ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত আবেদনের ফি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করে, স্বচ্ছন্দে পরীক্ষা নেওয়া। শিক্ষার্থীরা বাড়ির পাশে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ টাকার মতো করে পড়বে তাদের
উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদ

গতকাল শনিবার রাতে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি কমিটি উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কোর কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজ রোববার গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোনাজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশ করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা যেহেতু ১ সেপ্টেম্বর থেকে চূড়ান্ত আবেদন গ্রহণ করব, এর অন্তত দুই দিন আগেই নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে বার্তার মাধ্যমে ফলাফল, ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড জানানো হবে।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা কোর কমিটিকে হস্তান্তর করেছি। এখন আমাদের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে তা প্রকাশ করে দিতে পারে। শিক্ষার্থীরা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পাবেন।’

ফলাফল প্রকাশের বিষয়ে আজ সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কোর কমিটির আহ্বায়ক গণমাধ্যমকে জানাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষে এভাবেই ফেরন শিক্ষার্থীরা। ভেতরে জায়গা না পেয়ে ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের ছাদে করে গন্তব্য ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। তবে গুচ্ছ পরীক্ষার কারণে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা
ফাইল ছবি

সমন্বিত ভর্তি কমিটি উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কোর কমিটির আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফলাফল প্রস্তুত, আজ–কালকের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ হতে পারে।’

দ্বিতীয় দফায় বাড়াল চূড়ান্ত আবেদন ফি

এদিকে প্রাথমিক আবেদনের ফলাফল প্রকাশের পর চূড়ান্ত আবেদনের জন্য নির্বাচিত আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের আবেদন সম্পন্ন করার আবেদন ফি ১ হাজার ২০০ টাকা ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হলো চূড়ান্ত আবেদনের ফি। প্রথমে চূড়ান্ত আবেদনের ফি ৫০০ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরে আবেদন ফি ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৬০০ টাকা করা হয়। এবার ১ হাজার ২০০ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে
ফাইল ছবি

এ বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিকভাবে প্রাথমিক আবেদন ও চূড়ান্ত আবেদনের ফি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রাথমিক আবেদন ফি না আসায় নিরুপায় হয়ে চূড়ান্ত আবেদনের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ফান্ড, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করে, স্বচ্ছন্দে পরীক্ষা নেওয়া। শিক্ষার্থীরা বাড়ির পাশে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ টাকার মতো করে পড়বে তাদের।’

পরীক্ষার তারিখ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘পূর্বে তারিখ ঠিক করে বারবার পেছাতে চাই না। চূড়ান্ত আবেদন নেওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন উচ্চমাধ্যমিকের ভিত্তিতে

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোট তিনটি পরীক্ষা হবে । এর মধ্যে একটি পরীক্ষা হবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য, আরেকটি মানবিকের জন্য এবং অন্যটি ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো অনলাইনে নয়, সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে।

এবার প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। গত শিক্ষাবর্ষে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষির প্রাধান্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করেছিল। গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী নিজ নিজ বিভাগে একটি পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতা ও আসন অনুযায়ী যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয়

যে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।