ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ‘নাইট কোর্স’ রুখে দেওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ‘প্রফেশনাল মাস্টার অব লজ’ নামের অনিয়মিত কোর্স চালুর প্রতিবাদে সভা। আজ ‘আইন পরিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এ সভা হয় আইন অনুষদের সোনালুতলায়।
ছবি: সাজিদ হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে চালু হতে যাওয়া ‘প্রফেশনাল মাস্টার অব লজ’ নামের অনিয়মিত কোর্সকে ‘করপোরেট নাইট কোর্স’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিভাগটির প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী। তাঁরা বলেছেন, এই কোর্স চালু হলে বিভাগের শিক্ষার মান নষ্ট হবে। আইন অনুষদের ভালো পরিবেশ নষ্ট হবে।

‘আইন পরিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এই শিক্ষার্থীরা আজ বলেন, এত দিন আইন বিভাগে এ ধরনের কোনো কোর্স ছিল না। নতুন কোর্স চালুর ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সোনালুতলায় এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি প্রফেশনাল মাস্টার অব লজ কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আইন বিভাগ। স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম সিজিপিএ ২ দশমিক ৫০ অথবা দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকে উত্তীর্ণ (দুই বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন) শিক্ষার্থীরা এতে আবেদন করতে পারবেন। আগামী ১০ জুন বহুনির্বাচনী ও লিখিত পরীক্ষা এবং ১৭ জুন মৌখিক পরীক্ষা শেষে ১৫ জুলাই থেকে শুরু হবে ক্লাস। ক্লাসগুলো হবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আইন অনুষদের সোনালুতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে ‘শিক্ষা-ব্যবসা, একসাথে চলবে না’, ‘আইন বিভাগে নাইট কোর্স, বন্ধ কর করতে হবে’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি অনুষদ চত্বর ঘুরে সোনালুতলায় এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে সমাবেশ হয়।

বলা হচ্ছে যে প্রফেশনাল কোর্সের আয়ের ৪৫ শতাংশ শিক্ষকেরা পাবেন। এটা ঠিক নয়। এই ৪৫ শতাংশের একটি অংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পারিশ্রমিক হিসেবে পাবেন। একটি অংশ প্রশাসনিক খাতে, আরেকটি অংশ ব্যয় করা হবে লজিস্টিকসে (খাতা প্রভৃতি)
আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন

আইন বিভাগে অনিয়মিত এ কোর্সের বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলেছেন, এই কোর্স চালু করা হচ্ছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। কেউ কেউ আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে সিজিপিএ ২ দশমিক ৫০ নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে বলেছেন, বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী পেতেই এত কম শর্ত দেওয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আইন বিভাগের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন।

সমাবেশে আইন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, আইন বিভাগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ নাইট কোর্স বা অনিয়মিত কোর্স রাখার ব্যাপারে খুবই মরিয়া।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য যে ১৭টি সুপারিশ আছে, তার একটি হচ্ছে সব ধরনের সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করতে হবে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরও (রাষ্ট্রপতি) সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষকেরা চিন্তা করছেন, যেখানে এ ধরনের কোর্স নেই, সেখানেও চালু করতে হবে। অর্থাৎ ভালো পরিবেশকে ময়লা ফেলে দূষিত করতে হবে।

আইন বিভাগের চিত্র তুলে ধরে হাবিবুর রহমান বলেন, আইন বিভাগে এখন একধরনের তুঘলকি কাণ্ড চলে। যেমন স্নাতকের ফল প্রকাশিত হয়নি, অথচ স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা হয়ে গেছে; প্রথম বর্ষের ফল প্রকাশিত হয়নি, অথচ দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা হয়ে গেছে। অর্থাৎ আগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কি না, তা না জেনেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। যে শিক্ষকেরা বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কলোড নিতে পারছেন না, তাঁরা কীভাবে অন্য কোনো কোর্সে ক্লাস নেবেন!

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

আইন বিভাগের ছাত্র সাব্বির হোসেন ওরফে সিফাত শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আইন বিভাগের উন্নয়নের জন্য কোন খাতে কত টাকা লাগবে, সেই তালিকা আমাদের দিন। আমরা প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা মিলে সেই টাকাটা দিতে পারি কি না দেখি। আমরা সেই টাকাটা দিতে না পারলে আপনারা নাইট কোর্স খোলেন।’

আইন বিভাগের ছাত্র সালেহউদ্দিন সিফাত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফুল হাসান সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।

কী বলছে বিভাগ কর্তৃপক্ষ

আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন রকমের আশ্বাস পাই। সেসব আশ্বাসের খুব কমই পূর্ণ হয়।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ক্লিনিক্যাল লিগ্যাল এইড প্রোগ্রাম, মুট কোর্ট প্রোগ্রাম—এগুলো তহবিলের অভাবে দিনের পর দিন বন্ধ হয়ে আছে। এ বিষয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় এই প্রস্তাবটা (প্রফেশনাল কোর্স খোলা) আসে। পরে সব শিক্ষক মিলে সিদ্ধান্ত নেন। এটা বিভাগের কালেকটিভ (সম্মিলিত) সিদ্ধান্ত। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো রোল (ভূমিকা) নেই। বলা হচ্ছে যে প্রফেশনাল কোর্সের আয়ের ৪৫ শতাংশ শিক্ষকেরা পাবেন। এটা ঠিক নয়। এই ৪৫ শতাংশের একটি অংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পারিশ্রমিক হিসেবে পাবেন। একটি অংশ প্রশাসনিক খাতে, আরেকটি অংশ ব্যয় করা হবে লজিস্টিকসে (খাতা প্রভৃতি)।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তারা যদি তাদের বক্তব্যগুলো আমাদের লিখিতভাবে জানায়, তাহলে আমরা অবশ্যই একাডেমিক কমিটির সভায় বিষয়গুলো তুলে ধরব।’