একাদশে ভর্তির সুযোগ তো হলো, শিক্ষার্থী ভর্তি কীভাবে

প্রথম আলো ফাইল ছবি

২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম ধাপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ ধাপে ২৫ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের জিপিএ-৫ থাকলেও তারা তালিকায় স্থান পায়নি। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই; কারণ, এই শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ধাপে আবার আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে। তাদের কোনো অতিরিক্ত ফি লাগবে না।

অন্যদিকে যেসব শিক্ষার্থী প্রথম পর্যায়ে একাদশে ভর্তিতে কলেজ পেয়েছে বা নির্বাচিত হয়েছে, তাদের অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কলেজ নিশ্চায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বোর্ড নির্ধারিত নিশ্চায়ন ফি ৩৩৬ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংসহ যেকোনো অনুমোদিত মাধ্যম ব্যবহার করে পরিশোধ করতে হবে। এই নিশ্চায়ন প্রক্রিয়ার শেষ সময় ২২ আগস্ট (শুক্রবার) রাত আটটা পর্যন্ত। বোর্ডের দেওয়া সময়মতো নিশ্চায়ন না করলে ওই শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল হয়ে যাবে এবং তাঁকে দ্বিতীয় ধাপে নতুন করে আবেদন ও ফি প্রদান করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন ফি বা নিশ্চায়ন ফি পরিশোধের নিয়ামাবলি জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

ফলাফল নিশ্চায়নের পর কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সরাসরি ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ভর্তি নিশ্চিত হলে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর।

নিশ্চায়ন যাচাইকরণ প্রক্রিয়া

ফি জমাদানের পর যাচাইকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিশ্চায়নের স্থিতি দেখতে পারেন। অনেক সময় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে বিলম্ব হতে পারে, তাই নিয়মিত যাচাই করা জরুরি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তাদের নিশ্চয়ন ফি জমা দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তারা http://xiclassadmission.gov.bd/payment/payment.html এই লিংকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে প্রবেশ করে তাদের নিশ্চয়ন ফি জমার সর্বশেষ আপডেট দেখতে পারবেন।

ওয়েবসাইটের পেমেন্ট ভেরিফিকেশন পেজে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে নিশ্চায়নের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়। এতে করে কোনো ভুল বা বিলম্ব হলে তা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব।

নিশ্চায়ন না করার ঝুঁকিসমূহ

নিশ্চায়ন না করলে শিক্ষার্থীর নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেধাতালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী ধাপে নতুনভাবে আবেদন করতে হয়। তবে প্রতিটি পরবর্তী ধাপে আসন সংখ্যা কমে যাওয়ায় পছন্দের কলেজে ভর্তির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

যারা কৌশলগত কারণে প্রথম ধাপে নিশ্চায়ন এড়িয়ে আরও ভালো কলেজের আশায় অপেক্ষা করেন, তাদের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কারণ মাইগ্রেশন সুবিধা সীমিত এবং উন্নত কলেজে আসন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

একাদশে ভর্তির পরবর্তী ধাপগুলো হলো—

  • দ্বিতীয় ধাপে আবেদন: ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট

  • দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ: ২৮ আগস্ট

  • তৃতীয় ধাপে আবেদন: ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর

  • চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম: ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর

  • ক্লাস শুরু: ১৫ সেপ্টেম্বর

যেসব কাগজপত্র লাগবে—

ভর্তি নিশ্চায়নের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাখতে হবে এসএসসি মার্কশিট ও সার্টিফিকেট (অনলাইন কপি চলবে), প্রবেশপত্র, ২–৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, অনলাইন আবেদন কনফারমেশন পত্র, শিক্ষার্থীর ও অভিভাবকের মুঠোফোন নম্বর।

আরও পড়ুন

এদিকে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল পৌনে ১১ লাখ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। যদিও এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কারিগরিতে উত্তীর্ণ এক লাখের মতো পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাদ দিয়ে হিসাব করলেও এক লাখের বেশি পরীক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আবেদনই করেনি।

ঢাকার নটর ডেম কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বাকি সব কলেজ ও মাদ্রাসায় কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বাছাই কাজটি করা হয়। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহায়তায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভর্তির কাজটি হয়। ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হয় না। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে হয়। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করেছে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ভর্তির কাজটি আলাদাভাবে হয়ে থাকে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সময় বাড়িয়ে গত ৩০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত (১১ আগস্ট ছিল শেষ সময়) ভর্তির আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। তাতে দেখা যায় সব মিলিয়ে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৬ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।

সাধারণত, প্রথম পর্যায়ে ভর্তি হতে প্রায় সব শিক্ষার্থী আবেদন করে থাকে। কিন্তু পছন্দক্রম ও মেধার মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেকেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয় না। আবার নানা কারণে প্রথম পর্যায়ে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আবেদনও করে না। এ জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়েও ভর্তির আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে ভর্তির এই প্রক্রিয়ায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট। এই ধাপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে ২৮ আগস্ট। এরপর আবার ৩১ আগস্ট ও আগামী ১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে। এভাবে বাছাই প্রক্রিয়ায় শেষ করে ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তির কাজ শেষ করা হবে। তারপর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।